পুলিশের অভিযান
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বছরে ১২ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার
প্রকাশিত : ২০:১৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২১ | আপডেট: ২০:১৬, ১৮ জানুয়ারি ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত এক বছরে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশ। ২০২০ সালে শুধু পুলিশের অভিযানে উদ্ধারকৃত মাদদ্রব্যের মূল্য প্রায় ১২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এ সময় মাদক কারবারে জড়িত ৮০৮ মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিদায়ী বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ থানায় মাদকের মামলা হয়েছে ৫৯১টি। এছাড়াও একই সময়ে মাদকদ্রব্য ছাড়া প্রায় ৫২ লাখ ৩৪ হাজার টাকার অন্যান্য চোরাচালান পণ্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। চোরাচালানে জড়িত ৩৭৭ পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চোরাচালানের বিপরীতে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ২৫৯টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের অভিযানে ৭ কেজি ১৩২ গ্রাম হোরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে ১১৮ কেজি ৪০৫ গ্রাম। একই সময়ে ৬৪ হাজার ১৫৬ পিস ইয়াবা, ১৮ হাজার ৫২৪ বোতল ফেনসিডিল, ১৫৯৩ লিটার দেশী মদ, ১৯০ লিটার ওয়াসা, ১২ বোতল বিদেশী মদ এবং ১৫ অ্যাম্পল নেশাজাতীয় ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়েছে। চোরাচালান পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ৩টি স্বর্ণের বার, ৩০০ বস্তা সরকারি চাল, ৩৪ কেজি ভারতীয় বিড়ির মসলা, ৩২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৮৫ ভারতীয় জালরুপি ও ৩৪২টি ভেজাল ওষুধের কন্টিনার।
সূত্রের তথ্যমতে, উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের মূল্য ১২ কোটি ২৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা ও অন্যান্য চোরাচালান পণ্যের মূল্য ৫২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
জানা গেছে, চাঁপাইনববাগঞ্জ ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় মাদক ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাদক ও চোরাচালানে অল্প সময়ে বেশি অর্থ আয়ের আশায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে সীমান্তের সাধারণ মানুষ। মাদক পাচারের রুট ও কৌশল বদলিয়ে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে পাচারকারিরা। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে পাচারকারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে গ্রেফতার হচ্ছে কেউ কেউ। তবে গডফাদাররা বাইরে থাকায় পাচারকারীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসছে। এরপর আবার জড়িয়ে পড়ে চোরাচালান কারবারে।
সীমান্তের সচেতন মহলের দাবিÑ শুধু বিজিবি, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর প্রচেষ্টায় মাদক পাচার রোধ করা কঠিন। যেহেতু ভারত থেকে মাদক আসছে, তাই সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের আন্তরিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। পুলিশ বলছে, মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তবে সবার সহযোগিতা পেলেই মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কাঁটাতারের বেড়া না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাচারকারীরা সহজে এপার-ওপার যাতায়াত করে থাকে। নদীপথে বিভিন্ন কৌশলে ভারতে যাতায়াত করে পাচারকারিরা। এতে অনায়াসে মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন চোরাচালান পণ্য অনায়াসে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান পিপিএম বলেন, আমরা মাদকবিরোধী অভিযান ও মাদক উদ্ধার কার্যক্রম অভিযান অব্যাহত রেখেছি। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গডফাদার যেই জড়িত থাক, তাদের সঙ্গে কোনও আপস নয়। মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। পুলিশও মাদক কারবারিদের ধরতে কোন ছাড় দিচ্ছে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরোও বলেন, জেলা পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। সবার সহযোগিতা পেলে মাদক নিয়ন্ত্রণে আসবে। গেল বছর র্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অন্যান্য ইউনিটগুলোও মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালিয়েছে। সম্মিলিত অভিযানের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদক কারবারিদের তৎপরতা কমে আসছে বলেও তিনি জানান।
আরকে//
আরও পড়ুন