চাঁপাইনবাবগঞ্জে অস্ত্র-বিস্ফোরক মামলায় বছরে গ্রেফতার ১০৪
প্রকাশিত : ১৪:৩২, ২০ জানুয়ারি ২০২১ | আপডেট: ১৮:৪০, ২০ জানুয়ারি ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত এক বছরে ১১টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশ। ১১ মামলায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সময়ে ৭৩টি ককটেল ও ২ কেজি ১০০ গ্রাম গানপাউডার উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন থানায় বিস্ফোরক আইনে মামালা হয়েছে ২৩টি। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৯১ জনকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গেল বছরজুড়েই বিভিন্ন অভিযানে পুলিশ সফলতা দেখিয়েছে। সীমান্ত গলিয়ে দেশের অভ্যান্তরে আসা অস্ত্র ও বিস্ফোরকের বিষয়ে পুলিশ সবসময় সর্তক ছিল। ভৌগলিক ও রাজনৈতিক কারণে এখানে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকা খুবই কঠিন। এ জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ভারত থেকে আসা কোন অবৈধ অস্ত্র যাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পেরিয়ে অন্য জেলায় না যেতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক জেলা পুলিশ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের অপরাধ শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ৩৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে অস্ত্র মামলা ১১টি এবং বিস্ফোরক মামলা হয়েছে ২৩টি। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মিলিয়ে জেলায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে ৪০টি। ২০১৯ সালেও জেলার বিভিন্ন থানায় অস্ত্র আইনে ৪০টি মামলা হয়েছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন থানায় এসব মামলা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৮টি বিদেশী পিস্তল, সুট্যারগান ৩টি, ৯ টি ম্যাগজিন ও ২৬ রাউণ্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। একই সময়ে ২ কেজি ১০০ গ্রাম গান পাউডার ও ৭৩ টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তপথে অস্ত্র-বিস্ফোরক পাচারের ঘটনা পুরনো। বিভিন্ন কৌশলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসা অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক দেশের অভ্যান্তরে যায়। তবে ভারতে তৈরি কিংবা ভারতীয় সীমান্ত পথে যেসব অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেশে পাচার হচ্ছে, তার কোনটিতেই ভারতের নাম লেখা নেই। লেখা থাকে মেইড ইন ইতালি, ইউএসএ ও ইউকে।
বাংলাদেশঘেঁষা ভারতীয় সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কারখানা আছে। এসব অস্ত্র কারখানা থেকে অবৈধ অস্ত্র সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দেশে ঢুকে পড়ছে।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারকারী একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, বাংলাদেশের প্রতিবেশী একটি দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের বেশকিছু কারখানা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সেখানে নিম্নমানের অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা হয়। পরে সীমান্ত এলাকার অবৈধ কারবারিদের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে পাচার করা হয়। তারা বলছেন, এসব অস্ত্রের গায়ে বিভিন্ন দেশের নাম উল্লেখ করা হলেও আসলে সেই দেশের নয়। কারণ এসব অস্ত্রের মান অনেক খারাপ। ফিনিশিং ভালো নয়। নিম্নমানের লোহা দিয়ে তৈরি করা হয়। অস্ত্রের গায়ে খোদাই করে ইতালি, ইউকে ও ইউএসএ লিখে দাম বাড়িয়ে থাকে কারবারিরা।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা ছিল। কয়েক বছর আগেও এ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বোমাবাজির ঘটনা ঘটত। তবে পুলিশের তৎপরতার কারণেই অপরাধপ্রবণতা যথেষ্ট কমে এসেছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। অপরাধপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সদর থানার অন্তর্গত ছয়টি ইউনিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য ইসলামপুর ইউনিয়নে একটি পূর্ণাঙ্গ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র করা হয়েছে। তিনি বলেন, জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে ২০২০ সালের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন বছরে পুলিশ আরও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করবে। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান বরাবরের মতো অব্যাহত থাকবে বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান।
আরকে//
আরও পড়ুন