ধামইরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৮ম স্থান অধিকার
প্রকাশিত : ২০:৪০, ২৩ জানুয়ারি ২০২১
স্বাস্থ্য সেবায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় সারাদেশের মধ্যে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তৃণমূল ও নিভৃত পল্লী এলাকায় সরকারের স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে অনন্য উদ্যোগ নেওয়ার কারণেই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগটি সেরা দশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অসহায় ও দু:স্থ মানুষ ও শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিক আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডা. স্বপন কুমার বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সারাদেশের ৪১৩টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর একটি জরিপ চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগ। এক থেকে দশটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্কোর ১৭.৪০ পয়েন্ট। এর মধ্যে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১৭.৪০ স্কোর পেয়ে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর এই হাসপাতালে যোগদানের পর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ কারণে প্রথমেই স্বাস্থ্য বিভাগের সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের সঙ্গে বৈঠক করি। বৈঠকের সিন্ধান্ত মোতাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৮টি ইউনিয়নে ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রত্যন্ত এলাকার অসহায় মানুষের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎস সেবা অব্যাহত রাখতে নেওয়া হয় নানামুখী তৎপরতা। বিশেষ করে উপজেলার গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব যাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে করা যায়, তার পুরো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এই চিকিৎসক বলেন, উপজেলার ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১৪ জন সিএইচসিপি নারী রয়েছেন। এই ১৪ জনকেই ধাত্রী বিদ্যার ছয় মাসের কমিউনিটি স্কীল বার্থ এ্যাটেনডেন্ট ট্রেনিং দেওয়া হয়। বর্তমানে এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। আর এর সুফল হিসেবে এ স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব বহুগুণ বেড়েছে। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। এলাকার ছয় মাসের শিশুদের মায়ের বুকের দুধ পান এবং গর্ভবতী মাদের স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে কাউন্সিলিং অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) শতভাগ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ধামইরহাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড জয়জয়পুর গ্রামের ওমর ফারুক বলেন, তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার ববির (২৭) প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাৎক্ষণিক নেউটা কমিউনিটি ক্লিনিকে নেয়া হলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একটি তার ছেলে সন্তান জন্ম লাভ করে।
এছাড়া গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে একই কমিউনিটি ক্লিনিকে নেউটা গ্রামের রাজিয়া সুলতানা নামে অপর এক মায়ের স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব সম্পন্ন হয়। এ ব্যাপারে নেউটা গ্রামের মোশারফ হোসেন বলেন, বাড়ীর কাছে কোনও খরচ ছাড়াই নিরাপদে গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসব নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি বড় অর্জন। তাছাড়া আমরা গবীর মানুষ বাড়ীর কাছে এসব ক্লিনিকে এখন অনেক ওষুধ ও সেবা পাওয়া যাচ্ছে। যা আমাদের জন্য ভালো খবর।
নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে ধামইরহাট স্বাস্থ্য বিভাগের এ অর্জন নিঃসন্দেহে একটি ভালো খবর। গর্ভবতী মা, শিশু ও সকল বয়সের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে সেবা গ্রহণ করলে মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি কম থাকে। আমরা সকল মাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে বাচ্চা প্রসবের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ উপজেলার সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যাতে গর্ভবতী মা বাচ্চা প্রসব করতে পারে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এনএস/
আরও পড়ুন