ঢাকা, সোমবার   ০৭ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বেনাপোলে নিহত ৯ শিশু শিক্ষার্থীর স্মরণে দোয়া 

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:৫৯, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

Ekushey Television Ltd.

‘বুকে তীর বিদ্ধ অবস্থায় উড়ছে ৯টি কবুতর। শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। আর পাশেই রক্তের স্রোতে বইয়ের বর্ণমালা মুছে যাচ্ছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘আমার বর্ণমালা তুমি ভালো থেকো।’ বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নির্মিত হয়েছে এসব নিহত শিশু শিক্ষার্থীদের স্মরণে একটি স্মৃতি স্তম্ভ। ১৫ ফেব্রুয়ারি  বেনাপোল পিকনিক ট্রাজেডির সাত বছর। এ দিনটিকে ঘিরে সোমবার বেনাপোলে শোক দিবস পালিত হয়েছে।

২০১৪ সালের এই দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ শিশু শিক্ষার্থী। এসময় আরও ৪৭ জন শিক্ষার্থী ও ৩/৪ শিক্ষক আহত হয়। প্রতিবছর ন্যায় শোকের এই দিনটিকে ঘিরে বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি উদ্যোগে নেয়া হয় নানা কর্মসুচী। সকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন, শোকর‌্যালি, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। 

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় বেনাপোলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পেশাজীবী সংগঠন, শ্রমজীবী মানুষ, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা স্মরণ সভায় যোগ দিতে ওই বিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত হন। সেখান থেকে একটি শোকর‌্যালী বের করে বেনাপোলের গুরুত্বপুর্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিদ্যালয় মাঠে এসে শোভাযাত্রা শেষ হয়। এরপর ৯ শিশু শিক্ষার্থীর স্মৃতি বিজড়িত ভাষ্কর্যে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আয়োজনে নিহত শিশুদের স্বজনদের সাথে নিয়ে স্কুল সভাকক্ষে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। 

স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পঅর্পন শেষে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোস্তাক হোসেন স্বপনের সভাপতিত্বে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. এনামুল হক মুকুল, উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার নুর ইসলাম মৃধা, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার রাজমনি, বেনাপোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অহিদুজ্জামান অহিদ, বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইজ্জত আলী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু প্রমুখ।

২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেনাপোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে মেহেরপুরের মুজিবনগরে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে চৌগাছার ঝাউতলা কাঁদবিলা পুকুর পাড়ে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৭ জন শিক্ষার্থী, আহত হয় আরো ৭০ জন শিশু শিক্ষার্থী ও ৩/৪ জন শিক্ষক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ২ জন শিক্ষার্থী মারা যান। ঘটনাস্থলে নিহতরা হলো, বেনাপোল পৌরসভার ছোটআঁচড়া গ্রামের সৈয়দ আলীর দুই মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া (১০) ও তার বোন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী জেবা আক্তার (৮), ছোটআঁচড়া গ্রামের ইউনুস আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মিথিলা (১০), রফিকুল ইসলামের মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রুনা আক্তার মীম (৯), লোকমান হোসেনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শান্ত (৯), গাজিপুর গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সাব্বির হোসেন (১০) ও নামাজ গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী আঁখি (১১)। ১৩ দিন পর ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ছোটআঁচড়া গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ইকরামুল (১১) সর্বশেষ দুর্ঘটনার ৩২ দিন পর ১৯ মার্চ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় একই গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইয়ানুর রহমান (১১)। 

দিন মাস পার হয়ে ফিরে এসেছে ছয় বছর পর ঠিক এই দিনটি। কিন্তু ফিরে আসিনি হারিয়ে যাওয়া ৯ শিশু শিক্ষার্থী। আজো কাঁন্না থামেনি হারিয়ে যাওয়া এ সব শিশুদের পরিবারের। পথ চেয়ে বসে আছে এই বুঝি ফিরে আসছে তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানেরা। ঝঁরে যাওয়া ফুল ফিরে পাবেনা পরিবারের সদস্যরা। তাদেরকে অশ্রæতে স্মরন করলো সাত বছর পর আবারও বেনাপোলবাসি। 

কেআই//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি