সিরাজগঞ্জে শতবর্ষী দই মেলায় নারী-পুরুষের ঢল
প্রকাশিত : ১৮:২৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

শত বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় রসনা বিলাসী সিরাজগঞ্জবাসীর প্রাণের দই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় সনাতন ধর্মালম্বীদের সরস্বতী পূজা উৎসব উপলক্ষে পঞ্চমী তিথিতে পৌর শহরের মুজিব সড়কে মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল হতে শুরু হয় দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এই মেলা। এতে শহরের সকল ধর্মালম্বী দই প্রেমী নারী পুরুষ দই কেনার জন্য ভীড় জমায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খাঁটি দুধের সম্ভার খ্যাত সিরাজগঞ্জবাসী প্রাচীন আমল হতেই রসনা বিলাসী আর অতিথি পরায়ণ। দই মেলাটি জেলার আদি ঐতিহ্যের অংশ। যা শতবর্ষের ঐতিহ্যের মেলা বলা হলেও এ মেলার ইতিহাস প্রায় দুই শত বছরের পুরনো। মেলা উপলক্ষে সোমবার বিকেল থেকেই শহরের মুজিব সড়ক জুড়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত হতে ঘোষরা তাদের উৎপাদিত প্রসিদ্ধ হরেক রকমের বাহারি মাটির হাড়িতে দধি নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন।
স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী রাজাপুর, এনায়েতপুর, বেলকুচিসহ বগুড়ার শেরপুর এলাকার হরেক রকম দই এ মেলায় স্থান পায়। এবারই প্রথমবারের মতো মেলায় নানা রকম মাটির হাড়িসহ প্লাষ্টিকের পাত্রেও দই এসেছে। মেলায় বিভিন্ন স্বাদের দই ভিন্ন ভিন্ন দামে বেচাকেনা হয়। মেলায় আসা একেক অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। মেলায় এসব দইয়ের মধ্যে রয়েছে ক্ষীর খাসা, চন্দনচুর, খাসা, শাহী দই, টক দই ইত্যাদি।
মেলায় দই কিনতে আসা প্রদীপ চন্দ্র সাহা, রঘুনাথ দাস বলেন- এই মেলায় ঐতিহ্যবাহী ভালো দই পাওয়া যায়, যে কারণে আমরা ভালো দই কিনতেই মেলায় আসি। তবে এবার মেলায় দইয়ের দাম গত বছরের চেয়ে অনেক বেশী।
হেলেনা বেগম ও আরিফা খাতুন নামে ওপর দুই ক্রেতা বলেন, মেলার দই স্বাদে ও মানে খুবই ভালো হওয়ায় আমরা দই প্রেমীরা প্রতিবছর এই মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকি। দই ভাল করতে ঘোষরা অনেকটা প্রতিযোগীতা করায় দইয়ের মান তাই এখানে সর্বোৎকৃষ্ট।
স্থানীয় একাধিক ঘোষের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বৈশ্বিক করোনা দুর্যোগের কারণে চিনি ও দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে।
জেলার এনায়তেপুর এলাকার রনি ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী রঞ্জিস কুমার জানান, বর্তমানে মেলা এক দিনব্যাপী হলেও চাহিদা থাকার কারণে কোনও ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না। যার কারণে মেলার আগেই ঘোষেরা দই তৈরিতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েন। এবার করোনার কারণে দই একটু বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্চয় সাহা ও আরেক নেতা হিরোক গুণ জানান, তৎকালীন জমিদারী আমলে জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। সবচেয়ে ভাল দই ওয়ালা ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করা রেওয়াজ ছিল। তবে জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া দইয়ের মেলা এখনও মাঘ মাসের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে হওয়ার বাৎসরিক রেওয়াজ এখনও বিদ্যমান থাকলেও ভাল ঘোষকে পুরস্কার দেয়ার নিয়মটি নেই। তবে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে এই দই মেলার জৌলুশ আরও বাড়তো।
এনএস/
আরও পড়ুন