সংবাদ সম্মেলনে যা বলল সাংবাদিক মুজাক্কিরের পরিবার
প্রকাশিত : ১৫:৩০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিবাদমান দু’পক্ষের সংঘর্ষে সংবাদ সংগ্রহকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের বিচার চেয়েছে তার পরিবার।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সহিদ উদ্দিন এস্কান্দার কচি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানান তারা।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিক মুজাক্কিরের বড় ভাই নুরউদ্দিন বলেন, ‘ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বারবার আমাকে বাঁচান, প্লিজ ভাই আমাকে বাঁচান বলে আকুতি জানিয়েছিল আমার ভাই। কিন্তু উপস্থিত পুলিশ, রাজনৈতিক কর্মী কেউই তাকে বাাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘নিজ এলাকায় এভাবে আমাদের স্নেহের ছোট ভাই ও আপনাদের সহকর্মী বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের জন্য জীবন দেবে তা ভাবতেই আমাদের শরীর শিউরে ওঠে। আমার ভাইয়ের বুক ও গলা বুলেটের আঘাতে ঝাঝরা হয়ে গিয়েছিল, যা ইতিহাসের সকল নির্মমতাকে হার মানায়।’
নুরউদ্দিন বলেন, ‘মুজাক্কিরের বিভিন্ন সামাজিক, মানবিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। ঘটনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় দেশের সকল গণমাধ্যম পাশে থাকায় কৃতজ্ঞতা জানাই।’
মুজাক্কিরের বাবা নোয়াব আলী মাস্টার বলেন, ‘আমার ছেলে শুধু পড়ালেখা ও সাংবাদিকতাই করতো না, সে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াত।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন করে বলেন, ‘আপনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচার করেন তাহলে আমাদের চাওয়া পূরণ হবে।’
কান্না জড়িত কণ্ঠে মুজাক্কিরের মা মমতাজ বেগম দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘কে বা কারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তার বিচার চাই আমি।’
সংবাদ সম্মেলনে বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের বাবা, মা, বড় ভাই, বোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, মেয়র কাদের মির্জার বিরুদ্ধে গত শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাপরাশিরহাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীরা। মিছিলটি চাপরাশিরহাট বাজারে গেলে আবদুল কাদের মির্জার অনুসারীরা হামলা চালান। এ সময় দুই পক্ষকে দুইদিকে ধাওয়া করে এবং ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর কাদের মির্জার নেতৃত্বে শতাধিক অনুসারী মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে চাপরাশিরহাট বাজারে যান। একপর্যায়ে কাদের মির্জার সমর্থকেরা বাদলের বাড়িতে হামলা ও গুলি চালান।
এ সময় দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সাংবাদিক মুজাক্কির গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। মুজাক্কিরসহ আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। বিকেলে মুজাক্কিরকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধিন অবস্থায় ২০ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়।
এদিকে গত কয়েকদিন থেকে সাংবাদিক মুজাক্কিরের খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন জেলা-উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা। হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তারা।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় নিহতের বাবা নোয়াব আলী মাস্টার বাদী হয়ে অজ্ঞাত একাধিক ব্যক্তিকে আসামী করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওইদিন রাতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। মামলার দায়িত্ব পেয়ে বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্মকর্তারা। এসময় পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দেন।
এআই/এসএ/
আরও পড়ুন