ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

অসহায় বৃদ্ধা মায়ের পাশে নড়াইল পুলিশ সুপার

নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৩:৩৩, ১১ মার্চ ২০২১

ফুল মতি, ৮০ বছরের বয়োবৃদ্ধ এক নারী। সেই সঙ্গে ভাগ্য বিড়ম্বিত এক জননী। যে বয়সে ছেলে-মেয়েসহ পরিবার-পরিজনের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জীবনযাপনের কথা, সেই বয়সেই তার ওপর নেমে এসেছে চরম অবজ্ঞা আর অবহেলা। ছেলে-বউয়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এই বয়সে তাকে ঘর ছাড়তে হয়েছে।

অঝরে চোখের জল গড়িয়ে অভূক্ত অসহায় ফুল মতির শীর্ণ দেহ আরও জীর্ণ-শীর্ণ হলেও তাতে তার নাড়িছেঁড়া সন্তানের মন না গললেও একজন মানবিক পুলিশ সুপারের মন গলেছে। বয়োবৃদ্ধ ফুল মতির পাশে দাঁড়িয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় পিপিএম (বার)।

মর্মস্পর্শী এই ঘটনাটি নড়াইল সদরের শাহাবাদ ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের। এই অমানবিক ঘটনাটি জানার পর বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে নির্যাতিতা ফুল মতির বাড়িতে যান তিনি।

নির্যাতিতা ৮০ বছরের ফুল মতি জানান, তার স্বামী কৃষ্ণপদ গাইন প্রায় ১২ বছর আগে মারা গেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায় একমাত্র ছেলে শিবুপদ গাইন (৪২)। তবে কৃষক শিবুপদ ও তার স্ত্রী বয়োবৃদ্ধ ফুল মতির সঙ্গে ভালো আচরণ করত না। প্রায়ই তাকে মানসিক নির্যাতন করত। তবে বছরখানেক ধরে এই নির্যাতন অনেকটাই বেড়ে যায়।

সর্বশেষ গত ৬ মার্চ ছেলে শিবুপদ ও তার স্ত্রীর অমানুসিক অত্যাচার সইতে না পেরে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ৮০ বছরের বয়োবৃদ্ধ ফুল মতি। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলে ও তার স্ত্রীর অত্যাচারের বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানাবেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এক পর্যায়ে ফুলমতি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আসেন। তার ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের কথা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়কে খুলে বলেন তিনি।

মায়ের ওপর ছেলের এ ধরনের নিমর্ম অত্যাচারের বর্ণনা শুনে পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিক সদর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেনকে (পিপিএম) এ ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশ মোতাবেক বয়োবৃদ্ধ ফুল মতিকে গাড়িযোগে বাড়িতে রেখে আসেন এবং তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।

এরপর বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে বৃদ্ধা মায়ের খোঁজখবর নিতে তাদের বাড়িতে যান পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় পিপিএম (বার)। এ সময় ফুল মতিকে পুলিশ সুপার আশ্বস্ত করেন, তার ছেলে ও ছেলের বউ আর কোনো ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। যদি কখনো এ ধরনের দুঃসাহস দেখান, তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

এ সময় পুলিশ সুপার বৃদ্ধা ফুল মতিকে ফলসহ কিছু খাবার উপকার দেন।

ছেলে শিবুপদ ও তার স্ত্রী বলেন, আমরা ভুল বুঝতে পেরেছি। মায়ের সঙ্গে আর অন্যায় ও অমানবিক কাজ করবেন না।

ফুল মতি বলেন, পুলিশ সুপার স্যারের কারণে সংসারে আবার উঠতে পেরেছি। তবে কোনো মায়ের সঙ্গে যেন ছেলে-মেয়েরা এ ধরনের খারাপ কাজ না করেন, সেই আশা আমার।

উল্লেখ্য, ছেলে শিবুপদ ছাড়াও ফুল মতির আরও দুই মেয়ে আছে। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। 
এএইচ/এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি