ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ইটের মাপ কমিয়ে রাজশাহীতে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৬:০৩, ২০ মার্চ ২০২১ | আপডেট: ১৬:২১, ২০ মার্চ ২০২১

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ছোট বড় মিলে ৬৪টি ইটভাটা রয়েছে। অধিকাংশ ইটভাটায় স্বাভাবিক পরিমাপের চেয়ে ছোট আকারে তৈরি করা হচ্ছে ইট। আবার এসব ইটের দামও বেশি নিচ্ছেন মালিকরা। ফলে এসব ইট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।

জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে ভাটা মালিকরা মানহীন ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরি করছেন। সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, ভাটা মালিকদের কারসাজিতে অতিরিক্ত দামে ইট কিনে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

সরকারি নিয়ম অনুসারে প্রতিটি ইটের পরিমাপ হবে দৈর্ঘ ১০ ইঞ্চি, প্রস্থ ৫ ইঞ্চি ও উচ্চতা ৩ ইঞ্চি। অথচ ভাটা মালিকরা ওই নিয়মকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছেমত ইট তৈরি করছেন। কয়েকটি ভাটার ইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, দৈর্ঘ্য ১০ এর পরিবর্তে সাড়ে ৯ ইঞ্চি, প্রস্ত ৫ এর পরিবর্তে সাড়ে ৪ ইঞ্চি ও উচ্চতা ৩ এর পরিবর্তে পৌনে ৩ ইঞ্চি করে তৈরি করা হয়েছে। এসব ইট বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি সাত থেকে সাড়ে সাত টাকা দরে।

উপজেলার রামরামা গ্রামের ইট ক্রেতা আলাল উদ্দিন খরাদি জানান, সম্প্রতি এএসএম ভাটা থেকে তিনি ছয় হাজার এক নম্বর ইট কিনেছেন। প্রতি হাজার ইট সাত হাজার ২০০ টাকা দরে তিনি কিনেছেন। কিন্তু ইট বাড়িতে নিয়ে দেখা যায়, পরিমাপে আফ ইঞ্চি করে কম। এই ইট কিনে প্রতারিত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

এএসএম ভাটার ইট তৈরির এক কারিগর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাটা মালিকরা যে ফর্মা দিয়েছেন সেভাবেই ইট তৈরি করেছেন। প্রতিটি ইটের ফর্মার দু’দিকে আকারে হাফ ইঞ্চি ছোট করা হয়েছে। এর ফলে এক হাজার ইট তৈরির মাটিতে অতিরিক্ত ৬০ পিস তৈরি হয়।

এদিকে এএসএম ইটভাটার দায়িত্বে আব্দুস সোবহান মোল্লার ছেলে মকবুল হোসেন। মুঠোফোনে তার কাছে পরিমাপে ছোট ইট তৈরির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। উল্টো গালিগালাজ করে ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে বাগমারা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, বর্তমানে ইটের বাজারও প্রতিযোগিতার বাজার। কেউ যদি ইট ছোট তৈরি করে থাকেন তাহলে তার ইট গ্রাহকরা কিনবে কেন। মাপ দেখেই গ্রাহকরা ইট কেনে বলে জানান তিনি।

এদিকে, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলাতে ১৪টি ইটভাটা চালু রয়েছে। এসব ভাটাতেও ইট তৈরিতে সরকারি নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, ভাটাগুলো ইটের সাইজ ছোট করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আর এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে ইট তৈরিতে পরিমাপ কম দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। যারা এই কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে অচিরেই মাঠে নামা হবে।

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)এর রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, রাজশাহীতে নিম্নমান ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরি হচ্ছে। এসব ইট কিনে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়না।

রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, মান সম্পন্ন মাটি দিয়ে সঠিক পরিমাপে ইট তৈরির জন্য সকল ভাটা মালিকদের কাছে চিঠি দেয়া আছে। নিম্নমান ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরি দণ্ডনীয় অপরাধ। এ নিয়ে এখনও কোন অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
এএইচ/এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি