মাথা গোঁজার ঠাই নাই পঁচানব্বই উর্ধ্ব আছিয়া বেগমের
প্রকাশিত : ২০:২০, ১ এপ্রিল ২০২১
‘হুনছি এই চরেও বিদ্যুতের খুঁডি হালাইছে। আমার ঝুঁপড়ি ঘরডার খুঁডি বদলায় নাই। মাথা গোজার ঠাঁই নাই।’ - একথা পটুয়াখালীর বাউফলের ভূমিহীন অসহায় পঁচানব্বই উর্ধ্ব আছিয়া বেগমের। চন্দ্রদ্বীপের চর ওয়াডেল এলাকার তেঁতুলিয়া পাড়ে নড়বড়ে বাঁশের খুঁটির ঝুঁপড়ি ঘরেই আছিয়া বেগমের বসবাস।
চন্দ্রদ্বীপের ৯নং ওয়ার্ডের চরওয়াডেল এলাকার মৃত রত্তন আলী গাজীর স্ত্রী বৃদ্ধা আছিয়া বেগম। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো চরভূমে বিপদাপন্ন নানা সব ঘটনার স্বাক্ষী বয়সের ভারে ন্যূজ এই আছিয়া বেগম। চোখের সামনে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেশিদের নানা চড়াই-উৎড়াই দেখেছেন তিনি। হাত বাড়িয়েছেন ঝড়-ঝঞ্জা, জলোচ্ছ্বাসের মতো অনেকের বিপদে-আপদে। কিন্তু তিন দশক আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে নিজেই বিপদাপন্ন। চরভূমে ধানকাটা মৌসুমে ঝড়া ধান কুড়িয়ে ও স্থানীয়দের কাছে হাত পেতে সাহায্য সহোযোগিতা নিয়ে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন তিনি।
ছয় ছেলে, তিন মেয়ের জননী আছিয়া বেগম। মেয়েদেরকে বিয়ে দেয়ার পর যেটুকু সহায়-সম্বল ছিল তাও নদী ভাঙনে হারিয়ে গেছে। মাছ শিকার ও কৃষি শ্রমিকের পেশা ছেড়ে ছেলেরাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। সামান্য বয়স্কভাতা আর প্রতিবেশিদের দয়ার জীবন যেন তার। অসুখ-বিসুখে খবর পেয়ে ছেলেরা ছুটে না এলে কেবল প্রতিবেশি ছাড়া দেখভালের আর কোন ভরসা নেই। তেঁতুলিয়ার নদীর ভাঙনে কেবল স্বামীর ভিটেটুকুই বাকি আছে, এর মায়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ঝুঁপড়ি ঘরেই বসবাস তার।
আছিয়া বেগম জানান, বড় ছেলে সিদ্দিক গাজীর পেটে টিউমারের মতো দূরারোগ্য ব্যাধিতে কর্মহীন। রিক্সার পেডেলে চলে মেঝো ছেলে সিদ্দিক গাজীর পরিবার। মাছ ধরার কাজে জড়িত সবার ছোট কুদ্দুছ গাজী। তবে নদী ভাঙনে জায়গা-জমি বিলিন হওয়ায় ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনমতে খেয়েপড়ে বেঁচে থাকার আশায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছেন ছেলেদের সবাই। জীবিত নেই বড় মেয়ে রূপজান বিবি। স্বামীর প্রায় পাঁচ একর জমি বিলীন হয়েছে নদীর ভাঙনে।
রাস্তা সংস্কারের কাজে নাম অন্তর্ভূক্তিতে স্থানীয় মেম্বর প্রাধান্য দেয়নি তাকে। এই বৃদ্ধ বয়সেও প্রতিবেশিদের ঘরে ছোটখাট কাজকর্ম আর হাত পেতে চলতে হয় তাকে। ঘরের দাওয়ায় বসে বৈরী আচরণে জীবন-সংসার ছিন্নভিন্ন করা মাতাল তেঁতুলিয়ার স্রোতধারায় অপলক তাকিয়ে এক বিমূর্ত ভাবনায় বিভোর আছিয়া বেগম।
এই প্রতিবেদককে আছিয়া বেগম বলেন, ‘কই যামু। যাওনের আর জায়গা কই। চরের খাস জমিনেও যদি একটা ঘর পাইতাম। হুনছি শেখের বেডি (প্রধানমন্ত্রী) এই চরেও বিদ্যুতের খুঁডি হালাইছে। আমার ঘরডার খুঁডি বদলায় নাই। মাথা গোজার ঠাঁই নাই। একসময় অনেকের বিপদে-আপদে হাত বাড়াইছি। এ্যাহন করোনা কালে কেউ একটু সাহায্য সহোযোগিতাও করতে চায় না।’
চন্দ্রদ্বীপ ইউপির চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক আলকাস মোল্লা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বাউফলে ১০ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে গত ২৩ জানুয়ারি জমির দলিল ও নামজারী সার্টিফিকেট তুলে দেয়া হয়। বৃদ্ধা আছিয়া খুবই অসহায়। তাই স্থানীয় মেম্বর ফারুক চৌকিদারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘরের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য বলা হয়েছে।’
এএইচ/
আরও পড়ুন