‘বিশেষ অনুমতিতে’ বেনাপোলে ঢুকছে মানুষ
প্রকাশিত : ০০:০১, ২৮ এপ্রিল ২০২১ | আপডেট: ০০:০৪, ২৮ এপ্রিল ২০২১
ভারতে করোনার নতুন ধরণ রোধে বাংলাদেশ সরকার দুই দেশের সীমান্ত দিয়ে ১৪ দিন যাতায়াত বন্ধ ঘোষণায় আটকে পড়া যাত্রীরা দূতাবাসের বিশেষ অনুমতিতে দেশে ফিরছেন। তবে নতুন করে পাসপোর্টযাত্রীদের ভারত ও বাংলাদেশ ভ্রমণ এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।
ভারত সীমান্তে অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশিরা জানান, অন্তত একদিন আগে বর্ডার বন্ধের ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে বর্ডারে এসে আমাদের এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। ওপারে আটকে থাকা যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী এবং শিক্ষার্থী। গত দুইদিন ধরে আটকে থাকায় অনেক রোগী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানা গেছে।
ভারতের পেট্রাপোলে আটকা পড়া তিন শতাধিক যাত্রীর মধ্যে ৭০ বাংলাদেশি বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন। আজ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দেশে ফেরেন তারা। ইমিগ্রেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের বেনাপোলে একটি আবাসিক হোটেলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের নিজ খরচে সেখানে অবস্থান করবেন। কোলকাতাস্থ বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন অফিস থেকে এনওসি নিয়ে দেশে ফেরেন তারা।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, ভারতে করোনার নতুন ধরন সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশ সরকার গত ২৬ এপ্রিল থেকে আগামী ৮ মে পর্যন্ত স্থলপথে দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত বন্ধ ঘোষণা করেন। তবে নিষেধাজ্ঞাপত্রে উল্লেখ থাকে বাংলাদেশি দূতাবাসের ছাড়পত্র থাকলে তাদের আসা যাওয়ার সুযোগ থাকবে। সোমবার (২৬ এপ্রিল) সকাল থেকে দিনভর কোনো যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে না পারলেও হঠাৎ এদিন সন্ধ্যায় ৬ বাংলাদেশি দেশে প্রবেশ করেন।
এছাড়া মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত মোট ৪৪ জন প্রবেশ করে। ফেরত আসা ৪৪ বাংলাদেশির মধ্যে ৫ জন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশি উপ হাইকমিশন অফিসে কর্মরত ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং একজন ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড়। বাকিরা সবাই সাধারণ যাত্রী, যাদের বেশির ভাগ গিয়েছিলেন চিকিৎসায়।
এদিকে, বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দেরও দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে একটি ওয়েবসাইটে নির্দেশনা দেয় ভারতীয় দূতাবাস। এতে বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে দেশে ফেরার অনুমতিও পায়। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছে ৫৮ জন। এদিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভারতে ফিরেছে ১৪ জন।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ভারত থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিন বেনাপোলের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদিকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের আরটিপিসিআরের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকলেও তাদের বর্তমান শর্ত মানতে রাখা হচ্ছে ১৪ দিন আবাসিক হোটেলের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। তবে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ব্যক্তিগত খরচে থাকতে অপারগতা প্রকাশ করেন যাত্রীরা।
ভারত ফেরত যাত্রীরা বলেন, তারা বেশির ভাগ চিকিৎসায় গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞায় ভারতে আটকা পড়লে কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশি উপ হাইকমিশনার অফিসে আবেদন করে ছাড়পত্র নিয়ে ফিরেছেন। তবে বাংলাদেশে আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন তাদের জন্য একদিকে যেমন অনিরাপদ তেমনি ব্যয়বহুল। প্রতিদিন রুম ভাড়া ৫০০ থেকে এক হাজার গুণতে হবে। খাওয়াসহ অনান্য খরচ তো আছে। এছাড়া চিকিৎসা সেবার সুযোগ সেখানে নেই। কিভাবে অসুস্থ পরিবার নিয়ে থাকবেন। হোম কোয়ারেন্টাইনের আহŸান জানান যাত্রীরা।
বাংলাদেশে ফেরত আসা যাত্রী আশিকুল রহমান জানান, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার ভয়ে অনেক বাংলাদেশি দেশে ফিরতে চাইছে না।
এদিকে, সরকারের নিষেধাজ্ঞায় এ পথে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াতে বিধি-নিষেধ ঘোষণা করা হলেও দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক রয়েছে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য। তবে নির্দেশনা অনুয়ায়ী, স্বাস্থ্যবিধি পালন হচ্ছে না বন্দরে। আমদানি পণ্যের প্রবেশ দ্বারে নেই করোনা সংক্রমণ রোধ ব্যবস্থা। পণ্যবহনকারী ট্রাক চালক, শ্রমিক, নিরাপত্তাকর্মী কেউ যথাযথভাবে মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। এতে ঝুঁকি বাড়ছে সংক্রমণের।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, ভারতের ভেরিয়ান্ট অত্যন্ত ভয়ানক। এমনিতেই ভারত থেকে অতি জরুরি অক্সিজেন আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে কোনোভাবে একবার এ ভাইরাস দেশে ছড়িয়ে পড়লে মহামারি ধারণ করবে। রক্ষা পেতে সরকারি নির্দেশনার সবার মানা দরকার।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আশরাফুজ্জামান বলেন, সরকার ইমিগ্রেশন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পর ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৭৯ জন পাসপোর্টধারীযাত্রী দেশে ফিরতে কলকাতায় বাংলাদেশ দুতাবাসে আবেদন করেছেন।
গত দুই দিনে ফিরেছেন ৪৪ জন। বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকরা ভারতীয় হাইকমিশনার বরাবর আবেদন করে দেশে ফেরার অনুমতি পেয়েছেন ৫৮ জন। সকাল থেকে ভারতে ফিরেছেন ১৪ জন। ভারত থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিন বেনাপোলের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। একজন ভারত ফেরত করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশিকে যশোর সদর হাসপাতালে রেড জোনে নেওয়া হয়েছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব বলেন, বাংলাদেশি উপ হাই-কমিশনারের ছাড়পত্র থাকায় আটকে পড়া যাত্রীদের কিছু ফেরার সুযোগ পেয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বাংলাদেশি কোনো পাসপোট যাত্রী নতুন করে ভারতে যায়নি এবং ভারত থেকেও কোনো ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে আসেনি।
বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, বন্দরে বাণিজ্যের সাথে জড়িতরা সবাই যাতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, সেটি আবারও সচেতন করা হবে। এছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে।
এদিকে বেনাপোল বন্দরে আমদানি রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। বন্দরের অভ্যন্তরে ভারতীয় ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা বন্দর থেকে বেনাপোল বাজারে চলে না যায় এজন্য বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
এ ব্যাপারে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার বলেন, ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভারদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আনসার ও সিকিউরিটি ফোর্সের নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাতে করে ট্রাক ড্রাইভাররা বন্দরের বাইরে যেতে না পারে সেজন্য সবসময় তৎপর আছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, ভারত থেকে পণ্যবাহী গাড়ি প্রবেশের মুখে রফতানি গেটে ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকটিকে বেনাপোল কাস্টমস হাউস ও স্থলবন্দর যৌথভাবে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। তারপর ট্রাক চালকের হ্যান্ড স্যানিটাইজ, মাস্ক ও পিপিই নিশ্চিত করা হচ্ছে। তারপর বাংলাদেশে প্রবেশে করতে দেওয়া হচ্ছে তাকে বলে জানান তিনি।
কেআই//
আরও পড়ুন