ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

হুমকির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:৪২, ২ মে ২০২১

জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে হত্যার হুমকি দেয়ার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রিতা বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের চক-চাপাই গ্রামে। 

নিহত রিতা বেগম ওই গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের স্ত্রী। এ ঘটনায় শনিবার রাতে নওগাঁ সদর মডেল থানায় নিহতের মা রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। 

তবে ঘটনার পর থেকে আসামিরা বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত তাদের কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। 

এদিকে এই ঘটনায় চক-চাপাই গ্রামে ও নিহতের পিতার বাড়ি একই উপজেলার গাংজোয়ার গ্রামে বইছে শোকের মাতম।

অভিযোগে জানা গেছে, নিহত রিতা বেগমের স্বামী মোসলেম উদ্দিন শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ভটভটি চালিয়ে দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। গ্রামের মাত্র ২ শতক জমি নিয়ে মোসলেম উদ্দিনের ভাই ও ভাতিজাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে গত ২৮ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে দ্বিতীয় দফায় প্রতিপক্ষরা বাড়িতে এসে জমি না ছাড়লে পরিবারের সকলকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে যায়। 

এই ঘটনায় মোসলেম উদ্দিন ২৯ এপ্রিল সকালে তার ভাতিজা আলামিন প্রামাণিক (২৩), আলামিনের মা সাগিদা বেগম (৪৫), চাচাতো ভাই সানোয়ার প্রামাণিক (৩২) ও জলিল প্রামাণিকের (৩৫) বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। 

ওইদিন রাত ১টার দিকে রিতা বেগম প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বাড়ির বাহিরের বাথরুম থেকে ঘরে ফেরার পথে প্রতিপক্ষের লোকজন তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এসময় রিতা বেগম চিৎকার দিয়ে জীবন বাচাঁতে পুকুরে ঝাঁপ দেয়। তার চিৎকারে স্বামী, সন্তান ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। পরে পুকুর থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রিতা বেগম মারা যান। 

হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শনিবার বিকেল ৩টার দিকে মরদেহ নওগাঁ সদর মডেল থানায় নেয়া হয়। এসময় থানা পুলিশ মরদেহটি দাফন করার অনুমতি দিলে পরিবারের লোকজন নিহত রিতা বেগমের পিতার বাড়ি সদর উপজেলা গাংজোয়ার গ্রামে নিয়ে গিয়ে তার দাফন সম্পন্ন করে।

নিহতের স্বামী মোসলেম উদ্দিনের অভিযোগ, মাত্র ২ শতক জমির জন্য আমার ভাই-ভাতিজাসহ প্রতিপ্রক্ষের লোকজন গত ২৪ এপ্রিল প্রথম দফায় আমার বাড়ির উঠানে এসে ৫ দিনের মধ্যে জমি না ছাড়লে আমাদের সকলকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। এই হুমকির ৫ দিনের মাথায় ২৮ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে দ্বিতীয় দফায় আবারও তারা হুমকি দিলে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করি। 
অভিযোগের দিনগত রাতেই তারা আমার স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। মারা যাবার আগে আমার স্ত্রী অভিযুক্ত আলামিন, সাহিদা, সানোয়ার ও জলিলের নাম বলে গেছে। তারাই আমার স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

নিহতের মা রেকেয়া বেগম বলেন, আমার মেয়েটাকে হত্যা করা হয়েছে আগুন দিয়ে। এর তিন বছর আগেও সানোয়ার ও জলিল নামে দুই জন আমার মেয়েকে মেরে রক্তাক্ত জখম করেছিল। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

এ ব্যাপারে খোজঁ নিতে অভিযুক্ত ৪ জনের বাড়িতে গেলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তালা ঝুলানো রয়েছে। প্রতিবেশীরা জানায়, ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছে।

নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, এই ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার পর থেকেই আসামিরা পলাতক রয়েছে। তবে যেখানেই থাকুক তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি