ঢাকা, সোমবার   ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

টাওয়ার আছে নেটওয়ার্ক নেই, ৩ বছর ধরে দুর্ভোগে অর্ধলাখ গ্রাহক

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১২:১৯, ২১ মে ২০২১ | আপডেট: ১২:২১, ২১ মে ২০২১

গত তিন বছর ধরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন সেই টাওয়ার

গত তিন বছর ধরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন সেই টাওয়ার

দীর্ঘ তিন বছর ধরে মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন অর্ধলক্ষ রবি সিমের গ্রাহক। ডিজিটাল যুগেও বাইরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ওই এলাকার মানুষ। জনপ্রতিনিধি, মোবাইল সিম অপারেটর কোম্পানী, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনও সুফল মেলেনি। অনেকটা অন্ধকারে বসবাস করছে এখানকার মানুষ।

জানা গেছে, গত তিন বছর পূর্বে মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা এলাকার রহমতপুর গ্রামে স্থাপিত মোবাইল অপারেটর কোম্পানী রবির নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সংযোগ গুটিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত ওই এলাকায় নেটওয়ার্ক সংযোগের জন্য কোনও টাওয়ার স্থাপন করেনি রবি অথবা অন্য কোনও মোবাইল অপারেটর কোম্পানী।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ও পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার কয়লা, মরা কয়লা, দমদমা, ঘরকাটা, মধুছড়া, সৈয়দপুর, বরকানাল, ছোট কানাল, জিলতলি, গুজা, আসামছড়ি, তালতলা, সোনাই, পশ্চিম সোনাই, রহমতপুর, ইসলামাবাদ, নারায়নছড়ি, বালুটিলা, বদ্ধভবানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ওই টাওয়ারের আওতায় লক্ষাধিক সিম ব্যবহার করতেন প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক।

সরেজমিনে কয়লা এলাকার জিলতলি বাজারে গেলে স্থানীয় লোকজন তাদের দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন। এলাকাবাসী জানান, ২০১৪ সালে কয়লা এলাকার রহমতপুর গ্রামে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপন করে রবি কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান পাল্টে যায়। কিন্তু টাওয়ার স্থাপনের ৪ বছর পর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল টাওয়ারের দায়িত্বে থাকা লোকজনের কাছে চাঁদা দাবী করেছে মর্মে অজুহাতে টাওয়ার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে যন্ত্রপাতি গুটিয়ে নেয়। এরপর থেকে অচল হয়ে পড়ে ওই টাওয়ারের আওতাধীন প্রায় লক্ষাধিক মোবাইল সিম। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, কয়লা বাজার থেকে টাওয়ার পর্যন্ত জেনারেটরের তেল নেয়ার জন্য একটি গাড়িকে ১২ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হতো। বড়জোর ওই দূরত্বের জায়গায় ভাড়া ২ হাজার টাকা এবং তেলগুলো প্রভাবশালী ব্যক্তির গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি করে নেয়া যেত না। অথবা অন্য গাড়ি করে তেল নিলে তাদের গাড়ি প্রতি ১০ হাজার টাকা দিয়ে দিতে হয়। আবার টাওয়ারের দায়িত্বে থাকা প্রহরীদের বিরুদ্ধে তেল চুরি ও মূলবান যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগও ওঠে।

এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন, মোঃ নুর নবী, নুরু মিয়া, মোহাম্মদ ইউসুফ, নুরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম সুমন শাহাজাহানসহ একাধিক এলাকাবাসী বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল যুগে এসেও আমরা অবহেলিত। একে তো পাহাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলের কারণে আমরা সব সময় অবহেলিত। তার ওপর আমাদের এলাকায় স্থাপিত রবির টাওয়ার নিয়ে যাওয়ায় চরম বেকায়দায় পড়েছি। আমাদের এলাকায় বিদুৎ নেই, তার ওপর গত তিন বছর ধরে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে চরম অসুবিধায় রয়েছি। এখানকার কয়েক হাজার লোক প্রবাসে থাকে। তাঁদের সাথে ঠিকমত যোগাযোগ করা যায় না। মানুষের আপদ, বিপদে খোঁজ খবর দেয়া যাচ্ছে না। অন্তত ৮-১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মোবাইলে কথা বলতে হয়। এছাড়া মোবাইল নির্ভর ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এই বিষয়ে ১নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমার ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মানুষ অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছেন। তিন বছর পূর্বে রবি সিমের টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নেয়ার পর থেকে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পুন:রায় রবির টাওয়ার স্থাপন করে নেট সরবরাহের জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে রবির এরিয়া ম্যানেজার (মিরসরাই-সীতাকুন্ড) খায়রুল বশর বলেন, কয়লায় স্থাপিত ওই টাওয়ারের আওতাধীন নেটওয়ার্ক ভারতীয় সীমান্তেও কাজ করায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও আরও কিছু সমস্যার কারণে সংযোগ বিচ্ছন্ন করা হয়েছে। এরপর আমাদের কোম্পানী আরেকটি টাওয়ার স্থাপনের চিন্তা করছে। কিন্তু ওই এলাকায় দলিলভূক্ত কোনও জায়গা না থাকার কারণে টাওয়ার স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। ওখানে সব জায়গা রিজার্ভের। তারপরও কোম্পানী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি