করোনাজয়ী সেই মা-ছেলেকে সংবর্ধনা দিল নলছিটি উপজেলা প্রশাসন
প্রকাশিত : ১৬:১৮, ২২ মে ২০২১ | আপডেট: ১৬:২৮, ২২ মে ২০২১
করোনায় আক্রান্ত মাকে বাঁচাতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতাল নিয়ে যায় ব্যাংক কর্মকর্তা ছেলে। সেই আলোচিত ঘটনার মমতামীয় মা ও ছেলেকে সংবর্ধনা দিয়েছে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা প্রশাসন।
আজ শনিবার (২২ মে) সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
মা স্কুল শিক্ষিকা রেহেনা বেগম ও ছেলে কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান টিটুর হাতে ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী তুলে দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদার।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সেই মা ও ছেলে। বিষয়টি মিডিয়ায় তুলে ধরায় তারা কৃতজ্ঞতা জানান সাংবাদিকদের প্রতি।
গত ৯ এপ্রিল রেহানা বেগমের করোনা শনাক্ত হলে নলছিটির সূর্যপাশা বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ১৭ এপ্রিল দুপুরে হঠাৎ তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন চিকিৎসকরা। লকডাউনের মধ্যে কোন গাড়ি না পেয়ে সংকটাপন্ন মায়ের জীবন বাঁচাতে মোটরসাইকেলে ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু নিজের শরীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান মাকে।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার এই ছবি তুলে এক পুলিশ সদস্য ফেসবুকে আপলোড করলে তা ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তেই। হাসপাতালে মায়ের সেবাযত্ন করেন দুই ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু ও রাকিবুল হাসান ইভান। ৬ দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ অবস্থায় মাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। মা সুস্থ হলেও এরপর করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন টিটু। ১৫ দিন বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে ৯ মে সুস্থ হন তিনি।
এ ঘটনা নিয়ে দেশ ও বিদেশের মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হয়। সেই মা ও ছেলেকে সংবর্ধনা দিলেন উপজেলা প্রশাসন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জিয়াউল হাসান টিটিুর হাতে সন্মাননা স্বারক তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুম্পা সিকদার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নলছিটি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান, টিটুর মা করোনা বিজয়ী রেহানা পারভীন ও ছোটো ভাই রাকিবুল হাসান ইভান, নলছিটি প্রেসক্লাবের যুগ্মসম্পাদক সাংবাদিক মিলন কান্তি দাস, ঝালকাঠি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আল-আমিন তালুকদার, ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সহ-সম্পাদক কেএম সবুজ, সাংবাদিক অলোক সাহা, সাংবাদিক ইসমাঈল হোসাঈনসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুম্পা সিকদার বলেন, মাকে এবং তাঁর সন্তানকে নিয়ে করা এই অনুষ্ঠানটি আমার আট বছরের চাকরি জীবনের সেরা আয়োজন। এই আনন্দটুকু সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। মায়ের প্রতি এই দায়িত্বের জন্য টিটু অনেকের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি টিটু ও তার মায়ের সম্পূর্ণ সুস্থতা কামনা করছি।
নলছিটি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, টিটু তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যে উপায়ে মাকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছেছে সেটি একটি বিরল ঘটনা। আমরা টিটুকে সংবর্ধিত করতে পেরে আনন্দিত।
মা রেহানা পারভীন অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আমি শিক্ষকতা জীবনে শিক্ষার্থীদের যা উপদেশ দিতাম সেই সেবাগুলোই এখন সন্তানদের কাছ থেকে পাচ্ছি। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
টিটু বলেন, সন্তান মায়ের জন্য করবে এটাই স্বাভাবিক। তারপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্যারসহ সরকারি ঊর্ধতন কর্মকর্তারা আমাকে ফোন দিয়ে উৎসাহ দিয়েছেন।
এএইচ/
আরও পড়ুন