লকডাউনের প্রথম দিনে বাইরে প্রশাসন, ভেতরে জনগণ
প্রকাশিত : ১৩:৪৪, ২৫ মে ২০২১ | আপডেট: ১৭:১৪, ২৬ মে ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মঙ্গলবার থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। লকডাউন কার্যকরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে বিভিন্ন ব্যস্ততম এলাকা এবং সড়ক জনমানবশূন্য। তবে অনেক স্থানে স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ লকডাউন অমান্য করায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মানুষকে ঘরবন্দি রাখতে পুরো জেলায় ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।
লকডাউনের প্রথম দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কাউকে অন্য জেলায় যেতে ও আসতে দেয়া হচ্ছে না। বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত কিছু ওষুধ ও মুদি দোকান ছাড়া বন্ধ রয়েছে সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দূরপাল্লার যানবাহন। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনও অনেকটা নিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে। এছাড়া লকডাউনে বিভিন্ন অজুহাতে যেসব মানুষ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন তাদের পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তা জনশূন্য রয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে যারা বেরিয়েছেন তারা সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করেছেন। জেলা শহরের শান্তিমোড়সহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বেশি থাকায় মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের সড়ক ও বাজারগুলোয় মানুষ অবাধে চলাচল করছে। সচেতনার অভাবে গ্রামের মানুষের মধ্যে সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহারে উদসীনতা রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলা শহরে সাতজন ও উপজেলা পর্যায়ে ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লকডাউন বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। লকডাউনের প্রথম দিনে বিধি-নিষেধ অমান্য করায় মঙ্গলবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ৭৫ জনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে মোট ৬৩ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযানে সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রচারণা চালানো হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। ম্যাজিস্ট্রেটরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে অভিযান চালাচ্ছেন। কেউ অপ্রয়োজনে বাইরে বের হলে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করার বিষয়ে কোনো ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। জেলা প্রাশসক আরও বলেন, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউনে মানুষ সরকারি আদেশ ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান বলেন, সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নে জেলার প্রবেশপথে পুলিশি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কাউকে অন্য জেলায় যেতে ও আসতে দেয়া হচ্ছে না। পুলিশ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হলে তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে। তবে জরুরি সেবা, পণ্যবাহী যানবহন ও আম পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবহন অবাধে চলাচল করছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৭৩ জন এবং মারা গেছেন ২৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৮২ জন, মৃত্যু হয়েছে একজনের।
শিবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় সর্বাত্মক লকডাউন পালন করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে উপজেলা শহরের লকডাউনের আওতাভুক্ত সব দোকান ও মার্কেট বন্ধ রয়েছে। জরুরি সেবা ও পণ্য পরিবহন ছাড়া কোন যানবাহন চলছে না। ফলে রাস্তা, বাজার এলাকায় লোকজন না থাকায় ফাঁকা দেখা গেছে। তবে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানির কাজ স্বাভাবিক রয়েছে।
নাচোল : জেলা প্রশাসনের সীদ্ধান্তে মঙ্গলবার থেকে নাচোলে কঠোর লকডাউন চলছে। সকাল থেকে নাচোলের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। সব ধরনের যানবাহন বন্ধ ও জনসাধারণের চলাচল কম দেখা গেছে। নাচোল থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে আমরা মাঠে কাজ করছি।
গোমস্তাপুর : গোমস্তাপুর উপজেলায় সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। রহনপুর পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পুলিশের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে লকডাউনের আওতামুক্ত থাকলেও আম বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। বাইরে থেকে আম বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা আসতে না পারায় বাজার আমশূন্য রয়েছে।
ভোলাহাট : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন ঘোষিত সর্বাত্মক ৭ দিনের লকডাউনের কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে ভোলাহাটে। লকডাউন বাস্তবায়নের কঠোর অবস্থানে রয়েছে উপজেল প্রশাসন ও থানা পুলিশ। নির্দেশনা অমান্য করে দোকান খোলা রাখায় উপজেলার ৭টি দোকানকে সাড়ে ৮ হাজার জরিমানা করেছেন ভ্র্যাম্যমাণ আদালত। লকডাউনে উপজেলার বিভিন্ন দোকানপাট বন্ধ রয়েছে এবং রাস্তায় যানবাহন দেখা যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
আরকে//
আরও পড়ুন