ঢাকা, সোমবার   ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা

ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত : ২১:৫৩, ২৬ মে ২০২১ | আপডেট: ১৬:০১, ২৭ মে ২০২১

আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত এক সপ্তাহে হু হু করে বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ। আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের নির্দেশে মঙ্গলবার (২৫ মে) থেকে জেলায় কঠোর লকডাউন দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কঠোর লকডাউনের আওতায় জেলায় প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জেলার আমচাষীরা। তবে পরিবহনের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর কোন প্রভাব পড়বে না আম বাজারে। স্বাভাবিক থাকবে আমবাজার, পরিবহন ও বাজারজাতকরনের সকল কার্যক্রম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ।

এদিকে, গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম পাড়া হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই শুরু হবে খিরসাপাত, হিমসাগর, মোহনভোগ, ক্ষুদি খিরসা, লক্ষ্মণভোগ, বোম্বাই জাতের আম পাড়া শুরু। সেলক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলার আমচাষী, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও রফতানিকারকরা। তবে হঠাৎ করেই জেলাব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণায় কৃষকদের মনে নানা শঙ্কা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসনের সঠিক বার্তা না পৌঁছানো ও মাঠ পর্যায়ে পুলিশের তৎপরতা দেখেই তাদের মনে এই শঙ্কা বলে মনে করেন সচেতন মহল।
গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আমচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে কঠোর লকডাউন চলছে, রাস্তায় কোন গাড়ি চলতে দেয় না পুলিশ। এভাবে লকডাউন হলে কিভাবে কোথায় আম বিক্রি করবো? আশেপাশের প্রায় সবার গুটি জাতের আম পাড়া হয়ে গেছে। ভাবছিলাম, বুধবার থেকে আম পাড়া শুরু করবো। কিন্তু বাজারে আম নিয়ে যাওয়া নিয়ে মনের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।

কঠোর লকডাউনেও আম পরিবহনে কোন বাধা নেয়, বিষয়টি তিনি জানেন কি না, এমন প্রশ্ন করলে তিনি আরো বলেন, আমরা জানি ও দেখতে পাচ্ছি লকডাউন চলছে। কিন্তু আম পরিবহন বা বাজারজাতকরনে কোন বাঁধা নেই, এমনটি জানা নাই। তার মতো অনেক আমচাষী এমন হতাশা ও আতঙ্কে ভুগছেন বলেও জানান তিনি।

ভোলাহাট উপজেলার আমচাষী সাদিকুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম কিনতে বেশিরভাগ ক্রেতায় আসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। কঠোর লকডাউনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা আসতে পারবে না। এতে আমি বিক্রি করা যেমন কঠিন হবে, তেমনি অন্যদিকে নায্যমূল্য পাবে না আমচাষীরা। তাই বিষয়টি নিয়ে ভোলাহাটের আমচাষীরা উদ্বিগ্ন।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও আম রফতানিকারক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, জেলার বেশিরভাগ আমচাষী, ব্যবসায়ী ও আড়তদার স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত। তাই আম বাজারজাতকরন ও পরিবহন চলমান কঠোর লকডাউনের আওতায় নেই বিষয়টি সিংহভাগ আমচাষী জানেন না। তাই তাদের মধ্যে গতবছরের মতো ব্যবসা করতে না পারার একটা আতঙ্ক কাজ করছে। এনিয়ে আমচাষীদের মাঝে আরো ব্যাপকহারে সচেতন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসন কঠোর লকডাউনের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে আম বাজার করার সীধান্ত নিয়েছে। এটি আমচাষী, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও রফতানিকারকদের জন্য তেমন সুফল বয়ে আনবে না। কারন এভাবে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হবে না এবং আমচাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলা পর্যায়ের আম বাজারগুলোকে আরো বেশি মনিটরিং করা ও বাজারের পরিধি বাড়ানোই হবে যুক্তিযুক্ত।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। তবে এ জেলার প্রধান অর্থকারী ফল আমের বাজার চলমান রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমের বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে পরিবহনে দেয়া হয়েছে ছাড়। রাখা হয়েছে নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে। সরাসরি বাগান থেকে ট্রাকে আম পরিবহন করা যাবে। এছাড়াও অনলাইনে অর্ডার গ্রহণ করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম চলমান থাকবে। তিনি আরো জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে হাট বাসানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন যেসব বাজার রয়েছে সেগুলোর আকার বাড়ানোরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় এ বছর প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব আম বাগানের প্রায় ২৭ লক্ষ গাছ থেকে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি