শিশু আরাফ হত্যা উন্মোচিত, হত্যাকারী পরকীয়ায় বিকারগ্রস্থ মা
প্রকাশিত : ০৮:২০, ৯ জুন ২০২১ | আপডেট: ১০:৪৬, ৯ জুন ২০২১
বাবার সঙ্গে শিশু আমির হামজা আরাফ (৬)
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দেওগাঁও চেড়াডাঙ্গী গ্রামে শিশু সন্তান আমির হামজা আরাফ (৬)কে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পরকীয়ায় বিকারগ্রস্থ মা জান্নাতা আক্তার। ওই নারী মঙ্গলবার (৮ জুন) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে একথা জানায়। পরে তাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় শিশু আরাফকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশ। পরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
পরে আরাফের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য সুরতহাল প্রস্তুতকারী অফিসার এসআই পিযুষ কুমারসহ একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। তদন্ত টিম আরাফের বাবা খলিলুর রহমানকে তার ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে স্ত্রীকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদের পরামর্শ দেন।
পরামর্শ মোতাবেক খলিলুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ধারণা করেন যে, তার স্ত্রী আরাফকে সুকৌশলে হত্যা করেছে এবং এ হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য তার স্ত্রী বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।
পরে অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তদন্ত টিম জান্নাতা আক্তারকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর এক পর্যায়ে জান্নাতা তার ছেলে আরাফকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে জান্নাতা আক্তার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জান্নাতা জানান, তার স্বামী খলিলুর রহমানের সাথে ঢাকায় বসবাস করার সময় একই ফ্ল্যাটের ইমরান নামে এক অবিবাহিত ছেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে উভয়ের মধ্যে ভালবাসা এবং শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এর মধ্যে গত দুই মাস আগে লকডাউনের কারণে স্ত্রী ও সন্তানদের ঠাকুরগাঁওয়ের দেওগাঁও চেড়াডাঙ্গী গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে রেখে যান খলিলুর রহমান।
এদিকে, ইমরান জান্নাতা আক্তারকে বিয়ে করার জন্য মোবাইল ফোনে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। দুই সন্তান ও স্বামীকে ছেড়ে ইমরানকে বিয়ে করা নিয়ে জান্নাতা মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এমন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আরাফ তার নানার ঘরে দুষ্টামি করছিল, যা জান্নাতা আক্তার সহ্য করতে পারেনি। একপর্যায়ে তার ছেলে আরাফকে বিছানার উপর থেকে ফেলে দিয়ে মাথা চেপে ধরে গলার দুই পাশ থেকে গামছা পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সদর থানার একটি চৌকস টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার কারণে এমন একটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য দ্রুত উদঘাটন করা সম্ভব হলো। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না, অপরাধী যতো বড় ক্ষমতাবান হোক বা চতুর হোক আইনের আওতায় তাকে আসতেই হবে।
এএইচ/
আরও পড়ুন