ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

চোরের দৌরাত্মে শঙ্কিত মান্দাবাসী, প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশের ভূমিকা

রতন ইসলাম, নওগাঁ

প্রকাশিত : ১৩:২৯, ১৭ জুন ২০২১ | আপডেট: ১৩:৩২, ১৭ জুন ২০২১

নওগাঁর মান্দায় ক্রমাগত ঘটে চলেছে চুরির ঘটনা। গরু থেকে শুরু করে দোকানের মালামাল, অটোরিকশা, শ্যালো মেশিন, মোটরসাইকেল ও স্বর্ণালংকারসহ চুরি হচ্ছে নানা ধরনের মালামাল। গত ৮ মাসে ১৫টি গরুসহ প্রায় ৩০টি স্থানে চুরি সংঘঠিত হয়েছে। এতে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করে চম্পট দিয়েছে চোরেরা। উপজেলাজুড়ে কোনওরকমেই যেন থামছেনা এই চুরির ঘটনা। প্রশ্ন উঠেছে থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। তেমনি শঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ জুন বিকেলে প্রসাদপুর দুধের বাজারের পাশে ঘটে অটোরিকশা চুরির ঘটনা। রমজান মাসে প্রসাদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর খাঁ-পাড়া গ্রামের রাসেলের বাড়ি থেকে চুরি হয় গরু। ২৭ মে রাতে উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের বালিচ গ্রামে শাহিন আলমের খামার থেকে সিদ কেটে চুরি হয় অস্ট্রেলিয়ান জাতের দুটি গাভী। ২৫ মে পলাশবাড়ি বাজারে আব্দুল্লাহেল বাকির টেলিকম ও ভ্যারাইটি ষ্টোরের ছাউনির টিন কেটে সংঘটিত হয় দুর্ধর্ষ চুরি। 

এছাড়া গত ১ মার্চ তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কুরকুচি বিলে একই রাতে চুরি হয়েছে ৯টি শ্যালোমেশিন। এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় মেসার্স আরাফাত ট্রেডার্সে নগদ টাকাসহ প্রায় ৯ লাখ টাকার মালামাল চুরি যায়। গত ২১ জানুয়ারি রাত ১টার দিকে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের চৌদ্দমাইল মোড়ে নৈশ্য প্রহরীকে বেঁধে রেখে ৬ দোকানের মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। 

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর গনেশপুর ইউনিয়নের কাঞ্চন পশ্চিমপাড়া গ্রামে সাইফুল ইসলামের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেল, ১২ হাজার টাকা ও স্বর্ণের একটি চেইন চুরি করে। ৯ ডিসেম্বর তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের তেপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের বাড়িতে তিনটি গরু চুরি হয়েছে। এছাড়াও ওই সময় গত এক সপ্তাহে এই গ্রামে তিন পরিবারের ৭টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চোরের দল।

আর গত ২৯ নভেম্বর তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের রুবেল হোসেনের গোয়াল ঘরের তালা ভেঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান জাতের দুটি গাভী চুরি হয়েছে। 

স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদারকি ও টহল না থাকায় প্রায়ই এসব চুরির ঘটনা ঘটছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, পুলিশের সঠিক তদারকি না থাকায় ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে চুরির পর চুরি করে পার পেয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরচক্র। জীবনের শেষ অবলম্বন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে। এই সংঘবদ্ধ চোর চক্রের কাছ থেকে রক্ষা পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে এতো বড় একটি উপজেলা চলতে পারে না। আমরা এখন অনেক ভয়ে থাকি, কখন যে আমাদের সব কিছু চুরি যায়। অতি দ্রুত সংঘবদ্ধ চোরদের গ্রেফতার করা না হলে চুরি থামবেনা। 

স্থানীয়রা আরও জানান, চুরির পর পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন- এরপর আর খোঁজ খবর থাকে না। সাধারণ মানুষ হিসেবে আর কি করার আছে আমাদের। নিজেরা চুরি যাওয়া মালের সন্ধান করে এক সময় থেমে যেতে হয়।

মেসার্স আরাফাত ট্রেডার্স-এর মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, চুরির হওয়ার পর থানায় অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু তেমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একজনকে পুলিশের কাছে ধরে দিয়েছিলাম। ওই চোর পুলিশের কাছে দুইজনের নামও বলেছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করেনি। এখানে পুলিশের ভূমিকা নীরব। এর পিছনে যদি কিছু টাকা খরচ করি সেটাও লোকসান হয়ে যাবে। এ কারণে আর সামনে এগিয়ে যাই নি।

প্রসাদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর খাঁপাড়া গ্রামের রাসেল জানান, এ বছর ঈদুল ফিতরের দুইদিন আগে রোজার মধ্যে আমার তিনটি গরু চুরি হয়। এর পরেই থানায় অভিযোগ করেছি। তবে অভিযোগ করে কোনও ফল পাইনি। পুলিশ গরু উদ্ধার ও চোরদের গ্রেফতারে কোনও কাজ করেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন। 

বালিচ গ্রামের শাহিন আলম বলেন, গরু চুরি হওয়ার পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেছিলাম। কিন্তু কোথাও পাইনি। গরু দুটির আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করেছিলাম। তিনি থানা পুলিশকে জানিয়েছিল বলে শুনেছি।

ভারশোঁ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, চুরি ও মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগ থানায় দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ দেখা যায় না।

এ ব্যাপারে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, এলাকায় চুরি-ছিনতাইসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। চোর গ্রেফতার ও চুরি বন্ধের বিষয়ে পুলিশের তৎপরতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন- ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন চোর আটকসহ চোরাই মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

মান্দা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, আমাদের কাছে যে কয়টা অভিযোগ এসেছে সেসব বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া চোরাই মালামাল উদ্ধারও করা হয়েছে। পুলিশ সঠিকভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন বলে তিনি জানান।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি