ঢাকা, রবিবার   ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

শরণার্থী সেবায় নিয়োজিত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:০৭, ২০ জুন ২০২১

পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী শিবির কক্সবাজারে অবস্থিত। উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর বাস। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে সহিংসতার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এ দেশে প্রবেশ করে। এ ঘটনার পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে অন্যায়ের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এ দেশে প্রবেশ করেছে। যার মধ্যে ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। সরকারের সহযোগী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এসব পরিস্থিতিতে সবসময় সরকারের পাশে থেকে দুস্থদের সেবায় নিয়োজিত।

বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তথা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় হতে নির্দেশিত সকল কার্যক্রমেই রেড ক্রিসেন্টের সরব উপস্থিতি রয়েছে। কক্সবাজারে শুধুমাত্র শরণার্থী ও তাদের আগমণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের জন্য পরিচালিত হচ্ছে রেড ক্রিসেন্টের দুটি সহায়তা প্রকল্প। এর মধ্যে মিয়ানমার রিফিউজি রিলিফ অপারেশন (এমআরআরও) শুরু হয় ১৯৯১ সালে এবং পপুলেশন মূভমেন্ট অপারেশন (পিএমও) শুরু হয় ২০১৭ সালে। 

এই দুটি অপারেশন-এর মাধ্যমে রেড ক্রিসেন্ট ৩৪ টি ক্যাম্প এবং রামু, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য ত্রাণ (খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী), নগদ অর্থ, এলপিজি, স্বাস্থ্য -সুরক্ষা সামগ্রী, ওয়াশ সামগ্রী নিয়মিত বিতরণ করছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পরিচালনা করছে একটি পুরনাঙ্গ ফিল্ড হাসপাতাল সহ ১২টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। বর্তমানে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় রেড ক্রিসেন্ট তৈরি করেছে আইসোলেশন ও ট্রিটমেন্ট সেন্টার। পাশাপাশি ক্যাম্প ও উখিয়া- টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় রেড ক্রিসেন্ট কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছে।

প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবেলা করতে বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী- সিপিপি। এই কর্মসূচীর আওতায় ৩৪টি ক্যাম্পে ৩ হাজার ৪০০ প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক নিয়মিত আবহাওয়া ও দুর্যোগ বিষয়ক সভা পরিচালনা করে থাকে। 

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও মৌসুমি ঝড় মোকাবেলায়ও তারা সর্বদা তৎপর। এর পাশাপাশি, পাহাড়ি এই ক্যাম্পগুলোতে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ধস একটি পরিচিত চিত্র, সেখানে রেড ক্রিসেন্ট-এর এই স্বেচ্ছাসেবকগণ নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে ক্যাম্পবাসীদের সতর্কতা ও করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে এবং সাইট ম্যানেজমেন্টকে অবহিত করার মাধ্যমে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করে থাকে। সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পবাসীদের জন্য জরুরী খাদ্য সরবরাহ ও আশ্রয়ণ নির্মাণ করেছে রেড ক্রিসেন্ট।

কক্সবাজারস্থ বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি হেড অব অপারেশন জনাব এম এ হালিম বলেন, “কক্সবাজারে শরণার্থী সঙ্কট নতুন নয়। শুরু থেকেই সরকারের পাশে থেকে এই সঙ্কট নিরসনে কাজ করছে রেড ক্রিসেন্ট। আমরা প্রতিনিয়ত এই সঙ্কটে প্রয়োজনীয় সমাধান দিতে প্রস্তুত। তাৎক্ষণিক সহায়তা দিতেও আমাদের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীগণ সদা উপস্থিত। তাদের এই প্রচেষ্টাই আমাদের সফলতার চাবিকাঠি। এর প্রতিফলন দেখা গেছে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের উপস্থিত সমাধান ও ভাসানচরের ত্রাণ কার্যক্রম।”

“কক্সবাজারে রেড ক্রিসেন্টের কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়ক হিসাবে পাশে আছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি), আমেরিকান রেড ক্রস, ব্রিটিশ রেড ক্রস, ক্যানাডিয়ান রেড ক্রস, ড্যানিশ রেড ক্রস, জার্মান রেড ক্রস, জাপান রেড ক্রস সোসাইটি, কুয়েত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, কাতার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সুইডিশ রেড ক্রস, সুইস রেড ক্রস, টারকিশ রেড ক্রিসেন্ট, এবং ইউএনএইচসিআর। সকলকে তাদের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই।”

এ যাবৎ এমআরআরও এর অধীনে এক লাখ রোহিঙ্গা ও ২৫ হাজার স্থানীয় জনগণের জন্য এলপিজি, নগদ অর্থ সহায়তা ও দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধির কাজ এবং পিএমও এর অধীনে ৩ লাখ ১৯ হাজার রোহিঙ্গা ও ৬৪ হাজার স্থানীয় জনগণের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যসেবা, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি; আশ্রয়ণ, জীবিকা ও মৌলিক চাহিদা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমের পাশাপাশি নারী ও সর্বাধিক ঝুঁকিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের সুরক্ষা সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া, সিপিপি-এর অধীনে দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধির সেবা পাচ্ছে ৩৪টি ক্যাম্প ও টেকনাফের ৬টি, উখিয়ার ৫টি ও রামুর ১টি ইউনিয়নের সকল অধিবাসী। ২০১৭ সাল থেকে এ যাবৎ বিডিআরসিএস প্রায় দশ লক্ষ মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি