ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক থেকে পার্কিং এর নামে চাঁদা তোলার অভিযোগ 

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:৩৩, ২৯ জুন ২০২১ | আপডেট: ১৭:৩৫, ২৯ জুন ২০২১

দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি করে পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দরকে জিম্মি করে রেখেছে একটি সিন্ডিকেট। পণ্যবাহী ট্রাক থেকে ব্যাপক হারে পার্কিং এর নামে চাঁদা তোলায় বাংলাদেশের আমদানিকারকদের খরচের খাত বৃদ্ধি করছে বলে অভিযোগ করেছে আমদানিকারকরা। 

দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চললেও ভারতীয় রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। এ সিন্ডিকেট ধীরে ধীরে আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠায় এখন তারা কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না। তাদের তৈরি কালিতলা পার্কিং এ ইচ্ছামত পণ্যবাহী ট্রাক রেখে টাকা আদায় করা হচ্ছে। তাদের মর্জির উপর ট্রাক পেট্রাপোল সরকারি সেন্ট্রাল পার্কিং এ পাঠানো হচ্ছে।

বেনাপোল বন্দর সূত্র জানায়, বাংলাদেশে শিল্প কারখানার জন্য ভারতীয় পণ্য, কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির চাহিদা ক্রমশ: বাড়ছে। আমদানিকারকরা চীন ও ইউরোপের পরিবর্তে ভারত থেকে পণ্য ও কাঁচামাল আনতে আগ্রহী। কিন্তু বিলম্ব ও হয়রানির কারণে তারা বেনাপোল বন্দর থেকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। 

বনগাঁ পৌরসভার সদ্য বহিস্কৃত (১৫ জুন) মেয়র শংকর আঢ্য ডাকু পণ্য রপ্তানিতে বিরোধিতা করে কালীতলা পার্কিং থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক আসতে বাধা দিয়েছেন। বর্তমান দায়িত্ব প্রাপ্ত মেয়র গোপাল শেঠ ও একই ভাবে আগের মেয়রের পথে হাটছেন। এসব ট্রাকের প্রতিদিনের ভাড়ার টাকা ছাড়াও বনগাঁ পৌরসভা চাঁদা নিচ্ছে। প্রতিদিন ছোট গাড়ি ৫০ টাকা, ৬ চাকা ৮০ টাকা, ১০ চাকা ১২০ টাকা ও ট্রেলার ১৬০ টাকা হারে পার্কিং চার্জ আদায় করে থাকে। সিরিয়াল ভেঙ্গে আগে গাড়ি বের করে দেয়ার জন্যও বড় অংকের টাকা নিচ্ছে অতি গোপনে। ওই সমস্ত ট্রাক পার্কিএ না ঢুকিয়ে বিকল্প সড়কে পেট্রাপোল বন্দরে পাঠানো হচ্ছে। প্রতিদিন এক একটি ট্রাকের বিপরীতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। যা বাজারে বিক্রি পণ্যের মুল্য কয়েকদফা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ইন্দো-বাংলা চেম্বার অফ কমার্স সাব কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, ভারত থেকে রফতানি পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকগুলোকে পেট্রাপোল বন্দর ট্রাক টার্মিনালে সরাসরি না পাঠিয়ে বনগাঁ কালিতলা পার্কিং এ রেখে দেওয়া হচ্ছে। ওখান থেকে সিরিয়াল করে অর্থ্যাৎ কত তারিখে কোন কোন ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে আসবে সেটা নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ভাবে এ একটি ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে পৌছাতে সময় লাগছে ১৫ থেকে ২০ দিন। এর ফলে সময়মত আমদানিকারকদের পণ্য ছাড় করানো যাচ্ছে না। বার বার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাই কমিশনসহ দু‘দেশের বিভিন্ন মহলে জানানোর পরও বিষয়টি সুরাহা হচ্ছে না।  

বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রকৃতি ভারতীয় পণ্যের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে বেনাপোলে রেলকার্গোতে প্রচুর পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। আমদানিকারকের সামনে মুক্তবাজার অর্থনীতি, বিকল্প পণ্য, বিকল্প দেশ উন্মুক্ত। বহু আমাদানিকারক বেনাপোল থেকে চট্রগ্রাম, মোংলা ও অন্যান্য বন্দরে চলে গেছে। ৩৫ হাজার কোটি টাকা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কিছু লোভী ও দুর্বৃত্ত ব্যক্তির খামখেয়ালের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চলতে পারে না। দু’দেশের নীতি নির্ধারকদেরকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মাফিয়ামুক্ত সুষম বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সিন্ডিকেটমুক্ত সহজ সুষম বাণিজ্য নিশ্চিত করতে হলে কমলাপুর আইসিডির মতো শর্তহীন অবাধে সব রকম পণ্য রেলকাগো ও কন্টেইনারে আমদানির বিকল্প নেই বলে জানান তিনি। 

উল্লেখ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে দেশের সরকার অনুমোদিত ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১২টি বন্দরের অন্যতম বেনাপোল স্থলবন্দর। এ বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার। মাত্র ৩ ঘণ্টায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে পৌঁছাতে পারে কলকাতা শহরে। তেমনি একই সময় কলকাতা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছায় বেনাপোল বন্দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এপথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৮০ হাজার মে. টন পণ্য আমদানি হচ্ছে। 

আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা এবং রফতানি বাণিজ্য থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। প্রতি বছর ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। সরাসরি প্রায় ২০ হাজার মানুষ এবং পরোক্ষ ভাবে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষ নির্ভরশীল এই স্থলবন্দরের উপর। 

আমদানি পণ্যের মধ্যে গার্মেন্টস সামগ্রী, তৈরি পোশাক, শিল্পকারখানা ও ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল, খাদ্যদ্রব্য, চাল, পিয়াজ, তুলা, বাস, ট্রাক ট্যাসিস, মটর সাইকেল এবং পার্টস ও টায়ার রয়েছে।
রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, টিস্যু, ধানের কুড়া, সাদা মাছ, ব্যাটারি, সিরামিক টাইলস, সাবান, হাড়ের গুড়া,ওভেন গামেন্টস, নীটেড গামেন্টস, নীটেড ফেব্রিকস, কর্টন র‌্যাগস (বর্জ কাপড়) উল্লেখ্যযোগ্য।
কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি