ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

সৎ মাকে মৃত দেখিয়ে কোটি টাকার জমি দখল

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:৩৪, ৮ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ১১:৩৬, ৮ জুলাই ২০২১

যশোরের বেনাপোলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও খেয়ে না খেয়ে অন্যের আশ্রয়ে মরিয়ম নামে এক বিধবা নারী। ওয়ারিশ সনদের ফটোকপিতে জীবিত মরিয়ম বিবির নামের আগে মৃত লিখে জালিয়াতি করে তার কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে সতীনের সন্তানেরা। সম্পদ ফিরে পেতে গত কয়েক বছর ধরে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরপাক খাচ্ছেন মরিয়ম। 

মরিয়ম বিবি বেনাপোল পোর্ট থানার কাগজ পুকুর গ্রামের টেনাই মোড়লের স্ত্রী। স্বামী মারা যাওয়ার পর অন্য স্ত্রীর সন্তানেরা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আশ্রয় নিয়েছেন পরের বাড়িতে।

প্রতিবেশী আব্দুল জলিল বলেন, টেনাই মোড়লের ৩ স্ত্রী। তিনি জীবিত থাকাবস্থায় দুই স্ত্রীর মৃত্যু হলে মরিয়ম বিবিকে বিয়ে করেন। ২০০৮ সালে টেনাই মোড়লের মৃত্যু হয়। প্রথম স্ত্রীর ঘরে ৪ ছেলেমেয়ে থাকলেও শেষের ২ স্ত্রীর ঘরে কোন সন্তান ছিল না। টেনাই মোড়লের মৃত্যুর কয়েকদিন পরেই প্রথম স্ত্রীর সন্তানেরা মরিয়ম বিবিকে স্বামীর ভিটা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।

টেনাই মোড়লের সন্তানেরা ২০১২ সালে বেনাপোল পৌরসভা থেকে একটি ওয়ারিশ সনদ নেন। মূল ওয়ারিশ সনদ ফটোকপি করে মরিয়ম বিবির নামের আগে মৃত লিখে তা আবার ফটোকপি করে। আর এই ওয়ারিশ সনদ নিয়ে তারা মরিয়ম বিবির সকল সম্পদ তাদের নামে নামজারি করে নেয়।

বেনাপোল পৌরভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন ঘটনাটি জানতে পেরে মরিয়ম বিবি জীবিত রয়েছেন এই মর্মে একটি প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন। সেটিসহ যাবতীয় তথ্য প্রমাণাদি নিয়ে আদালতের আশ্রয় নেন মরিয়ম বিবি। পরবর্তীতে সকল দলিল প্রমাণাধি দেখে ২০১৯ সালে মরিয়ম বিবির পক্ষে রায় প্রাদান করে আদালত। 

আদালত মরিয়ম বিবিসহ টেনাই মোড়লের সকল ওয়ারিশদের নামে জমি নামজারি করার জন্য ওয়ারিশদের কাছে নোটিশ পাঠায়। টেনাই মোড়লের তিন ছেলে আলী হোসেন, নুর হোসেন ও রবিউল আদালতের কোন নির্দেশ না পাওয়ার কথা বলে পুনরায় আপিল করেন। কিন্তু আজ দু’বছর পার হলেও এখনো তার কোন সুরাহা হয়নি। 

বরং প্রতিমুহূর্তে প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের হুমকি-ধামকিতে ভয়ে তটস্থ মরিয়ম বিবি। যার কারণে তিনি চরম হতাশয় ভুগছেন। শুধু মরিয়ম বিবি নন, আইনী কাজে সহায়তা করার জন্য প্রতিবেশি আব্দুল জলিলকেও নিয়মিত হুমকি দেয়া হচ্ছে।

বৃদ্ধ মরিয়ম বিবি বলেন, আমার স্বামী টেনাই মোড়ল জীবিত থাকা অবস্থায় ভিটেবাড়ি থেকে আমার নামে ১০ কাটা জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমার স্বামীর প্রথম স্ত্রীর সন্তানেরা আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করে ভিটে থেকে তাড়িয়ে দেয়। এখন প্রতিবেশী আব্দুল জলিলের জমিতে কুড়ে ঘর বেধে বাস করছি। 

‘ওয়ারিশ সূত্রে আমি সাড়ে ৬ বিঘার মতো জমি পাবো। যার বাজার মূল্য কোটি টাকার উপরে। অর্থাভাবে নিজের খাবার যোগাড় করতে পারছি না। জমি উদ্ধার করতে এখন আদালতের খরচ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না’ জানান তিনি।

পৌরসভার কাগজ পুকুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার আমিরুল ইসলাম জানান, টেনাই মোড়লের মোট জমির পরিমাণ প্রায় ১৬ একর। মৃত্যুর আগে তিনি তার তৃতীয় স্ত্রী মরিয়ম বিবির নামে ভিটে থেকে ১০ কাটা জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু টেনাই মোড়লের মৃত্যুর পর তার ছেলেরা ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি করে জীবিত মরিয়ম বিবিকে মৃত দেখিয়ে সকল জমি নিজেদের নামে নামজারি করে নেয়।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি