ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

মোবাইল সেট ভাঙ্গার অপরাধে স্বামীর হাতে জীবন দিল স্ত্রী

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:০২, ১৪ জুলাই ২০২১

জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের একটি ধান শুকানোর চাতালে মোবাইল সেট ভাংচুর করার অপরাধে স্বামীর হাতে জীবন দিতে হলো স্ত্রীকে। ৩ সন্তানের জননী শাহিনুর আকতারকে (৩০) মারপিট করে হত্যা করে স্বামী আজিবর রহমান। ওই ঘটনার পর থেকে স্বামী পলাতক। 

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) রাতে পৌর শহরের পাঁচশিরা-মাত্রাই সড়কের রেহেনা চাউল কল-২ নামে চাতালে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শাহিনুর-আজিবর দম্পতির বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার বুরুঙ্গি গ্রামে। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রায় ২০ বছর ধরে কালাই পৌর শহরের বিভিন্ন ধান শুকানো চাতালে কাজ করে আসছিলেন। তারা সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করছিলেন। তাদের সংসারে আশিকুর রহমান আপন (১২) ও পরান (৮) নামে দুই ছেলে এবং খুশি (২) নামে এক মেয়ে রয়েছে। 

মঙ্গলবার বিকেলে শাহিনুর-আজিবর দম্পতির দুই ছেলে আপন ও পরান ছোট বোন খুশিকে নিয়ে চাতালে বসে বাবার মোবাইলে গেম খেলছিল। এই ফাঁকে স্বামী-স্ত্রী মিলে ধান শুকানোর কাজ করছিল। বড় ছেলে আপন ৪০ মিনিট খেলার পর ছোট ছেলে পরানকে মোবাইল দেয়। তখন বোন খুশিকে নিয়েছিল আপন। হঠাৎ করে খুশি কান্না করতে থাকলে মা শাহিনুর কাজের ফাঁকে এসে মোবাইল সেট কেড়ে নেয় এবং দুই ছেলেকে শাসন করে। 

এমন অবস্থা দেখে আজিবর তার স্ত্রীকে একটি থাপ্পর মারে। তখন স্ত্রী শাহিনুর স্বামীর উপর রাগ করে ওই মোবাইল সেট মেঝেতে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। এর পরই স্ত্রীকে মারপিট করতে থাকে আজিবর। এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শাহিনুর। ওই অবস্থায় তাকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় আজিবর। সেখানে করোনার রোগী ভর্তি থাকায় তাদেরকে পার্শ্ববর্তী ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওই অবস্থায় অটো ভ্যানে স্ত্রীকে রেখে পালিয়ে যায় স্বামী আজিবর।

নিহত শাহিনুরের ছোট ছেলে পরান বলেন, মোবাইল ভাঙ্গার জন্য মায়ের বুকে লাথি মারে বাব। তখন মা মাটিতে পরে যায়। বাবা ও সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে যায় মাকে। পরে আমার মা মারা গেছে।
 
প্রতিবেশী রেজাউল করিম বলেন, মারপিটের ঘটনার পর আমি এসে দেখি তার স্ত্রী মাটিতে পড়ে আছে। তখন ওর স্বামী এবং আমরা সবাই মিলে অটোভ্যান করে কালাই হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে করোনার রোগী ভর্তি থাকায় তাকে নিয়ে ক্ষেতলাল হাসপাতালে যাওয়ার পথে সে মারা যায়। এরপর স্বামী আজিবর টাকা ভাংতি করার কথা বলে লাশ রেখে পালিয়ে যায়।

নিহত শাহিনুরের ভাই শিপন বলেন, আমার ভগ্নিপতি একজন নেশাখোর। এর আগেও বেশ কয়েকবার তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। আজ আমার বোনকে সামান্য একটা মোবাইল সেট ভাঙ্গার জন্য মারপিট এবং নির্যাতন করে হত্যা করেছে। ওর বিচার চাই।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি