ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

চোখের জলে সংসার চলে আজগার-সুফিয়ার

জামাল হোসেন, বেনাপোল

প্রকাশিত : ১৬:৪৬, ২৮ জুলাই ২০২১

প্যারালাইসিসে আক্রান্ত আজগার আলীর বয়স পঁচাশির মত। তার চিকিৎসা আটকে আছে অর্থাভাবে। তিন শতক জমির মধ্যে এক শতক বিক্রি করে এতদিন চিকিৎসা খরচ চালালেও এখন তিনি আর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৬৫) অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বিপাকে। চোখের জল যার একমাত্র সম্বল। 

যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষনপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের রাস্তার ধারে আজগার আলীর ছোট্ট কুড়ে ঘর। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে শরিফুল ইসলাম দিনমজুর। বড় মেয়ে পাপিয়া এক বছর আগে দুটি সন্তান রেখে মারা যায়। ছোট মেয়ে সিপিলা খাতুন বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকে। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস ছেলে শরিফুল ইসলাম আগে থেকেই আলাদা হয়ে গেছেন। তার দিন চলেনা, পরিবার নিয়ে কোনো মতে দিনমজুরীতে সংসার চলে শরিফুলের।

এ অবস্থায় অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে না পেরে অসুস্থ আজগার আলী মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য সামান্য সহযোগিতা করলেও চেয়ারম্যানের কাছে চিকিৎসার অর্থ সহায়তার আবেদন করেও সাড়া মেলেনি। এতে অসহনীয় দুরবস্থায় দিন কাটছে আজগার আলী ও সুফিয়া বেগমের।

প্যারালাইসিসে ধুঁকছেন আজগার আলী। দীর্ঘ ১০ বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন আজগার আলী। তখন থেকে কাজকর্ম খুব বেশি করতে না পারলেও মোটামুটি চলার মত কাজ করতে পারতেন। কিন্তু গত ১০-১১ মাস আগে স্ট্রোক করে বর্তমানে অচল হয়ে পড়ে আছেন তিনি। হারিয়ে ফেলেছেন হাঁটাচলার ক্ষমতা, সেই সাথে কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়েছেন। 

কয়েক বার মানুষের কাছ থেকে ঋণে টাকা নিয়ে চিকিৎসা শুরু করলেও পুরোপুরি সুস্থ না হতেই ফুরিয়ে যায় সেই ঋণের টাকা। সারাদিন চোখের জল ফেলে পঙ্গু স্বামীর খেদমত করেন সুফিয়া খাতুন। ঘরের ভেতর প্রশাব পায়খানা করেন তার স্বামী। সে চলতে ফিরতে পারে না। সারাদিন স্বামীর সেবা আর ফাঁক বুঝে খাবার জোগাড় করাই সুফিয়ার নিত্যদিনের কাজ। পয়সার অভাবে ওষুধের কথা তারা ভুলেই গেছে। দু’মুঠো খাবার যেখানে জোটে না সেখানে আবার ওষুধ? তাই এই বয়সেও সারাদিন ভিজে থাকে সুফিয়া বেগমের চোখ।

সুফিয়া বেগম বলেন, শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সরকারি সহযোগিতা পায়নি। এবার দুটি ঈদ গেছে তাতে কোনো অনুদান সহযোগিতা পায়নি তারা। আমাদের নামে কোনো চালের কার্ডও নেই। তবে মেম্বার আব্দুল মাঝে-মধ্যে চিকিৎসা খরচের কিছু টাকা দিয়ে যায়।

এই ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল বলেন, আমি সবসময় আজগার আলী ও সুফিয়া বেগমের সাধ্যমত সার্বিক সহযোগিতার চেষ্টা করি।

লক্ষনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘তাদেরকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আমি তাদের একটা চালের কার্ডের ব্যবস্থা করে দিবো।’

এদিকে, অসুস্থ আজগার আলীর নাম ও ছবি ব্যবহার করে নিজের বিকাশ নাম্বার দিয়ে শার্শার লক্ষণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে শওকত আলী প্রতারণা করে কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি