ঢাকা, সোমবার   ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সরকার

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১২:২১, ৯ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ১২:২২, ৯ আগস্ট ২০২১

ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ৯০টিরও বেশি ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। এর মধ্যে সরকারি তালিকায় ৩৭টি জাতি গোষ্ঠীর অবস্থান শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। প্রত্যেকটি জাতি গোষ্ঠীর ঐতিহ্য রক্ষায় সরকার বদ্ধ পরিকর। তাদের জীবনমানের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, যে সকল নৃ-গোষ্ঠী এখানে রয়েছে তাদের মধ্যে পাহাড়ী এলাকার ১২টি স্থানে রয়েছে খাসিয়া বা খাসি সম্প্রদায়। দুটি গ্রামে বসবাস করেন মণিপুরি সম্প্রদায়। প্রায় ৫টি রিমোট এলাকায় বসবাস করেন ত্রিপুরা সম্প্রদায়। চাকমা, বর্মণ বা কোর জাতি শহর এলাকায় বসবাস করেন।

এছাড়া চা বাগানের উঁচু ও রিমোট এলাকায় বসবাস করেন গারো, ওঁরা/ উরাং, সাঁওতাল, মুন্ডা, মালপাহাড়ী, পাহাড়ি, কোল বা কল, হাজং, কন্দ, কড়া বা মুদি, গন্জু, গড়াইত, তেলী, তুরি বা মিধা, পাত্র, বাগতী বা বাকতি, বড়াইক বা বাড়াইক, ভূমিজ, মালো বা ঘাসিমালো, মাহালি, মুসহর বা রিকিয়াস, রাজুয়ার, লোহার বা কর্মকার, শবর, খারিয়া, খেড়োয়ার, তংলা, ভিল বা ভীম শহরা বা তেলেঙ্গা, ভূইমালী বা ভূঁইয়া, পাঙন (মণিপুরী মুসলিম)। 

এসব আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা যে সকল জায়গায় বসবাস করেন তা এক সময় ঘন জঙ্গল ছিলো। বনের হিংস জীবজন্তুর সাথে লড়াই করে তাদের পূর্বপুরষরা এখানে বসতি স্থাপন করেন। নিয়ন্ত্রিত রাজ্য ব্যবস্থাপনা বা সরকার থেকে তারা অনেকটা দূরে থাকতেন। বসতির আসপাশে বিভিন্ন ফসলের জুম চাষ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। 

কিন্তু যুগ পাল্টেছে, দেশে মানুষ বেড়েছে। বন জঙ্গল উজার হতে হতে পিঠ টেকেছে দেয়ালে। যে টুকুই আছে তা আবার তৎকালীণ বিট্রিশ সরকারের সময থেকেই লিজ দেয়া শুরু হয় চা বাগান হিসেবে। তাদের বসবাসকৃত জমি অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের নিজের নামের রেকর্ড পত্র না থাকায় এটি খাস খতিয়ানের অর্ন্তভুক্ত। আর খাস জমি হিসেবে তা লিজ পেয়ে যান চা বাগান মালিক ও কোম্পানীসহ অনান্য প্রভাবশালীরা। লিজ পাওয়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ এটি দখলে এসে দেখতে পান তাদের অনেক জমি আদিবাসীদের দখলে।

বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পিডিসন প্রধান সুচিয়াং বলেন, ভূমিহীন হিসাবে পরগাছার মতো বসবাস করায় তাদের দিন কাটে উচ্ছেদ আতংকে। অথচ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত পণ্য আজ দেশের বাজার ছাড়িয়ে রপ্তানী হচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে।

শ্রীমঙ্গল লাউয়াছড়া পুঞ্জি প্রধান পিলাপত্মী জানান, পাহাড়ের উপরে বসবাসকারী অধিকাংশ খাসিয়া পুঞ্জির নেই নিজস্ব কোন রাস্তা। অন্যের লিজকৃত চা বাগানের জমি ও লেবু-আনারসের বাগানের মধ্যদিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে ছোটখাট সংঘাত সংঘর্ষ থেকে শুরু করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও। এছাড়া বিশুদ্ধ পানির অভাব, স্যানিটেশন সমস্যা, শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত ব্যবস্থা সবকিছুতেই অনেক পিছিয়ে রয়েছে এ জনগোষ্ঠী।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি নেছার উদ্দিন জানান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিষয়টি সরকার অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রায় ১২টি খাসিয়া পুঞ্জি, কয়েকটি ত্রিপুরা পল্লী, সাওতাল ও গাঢ় পল্লী রয়েছে। দুটি খাসি পুঞ্জির নামে রেকর্ডভুক্ত জমিও আছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একজনকে সমন্বয়ক দেয়া হয়েছে।
 
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমন্বয়ক তাজুল ইসলাম জাবেদ জানান, বিগত কয়েক বছরে  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন উনয়নমূলক কর্মকাণ্ডে উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠীর জীবনমানের দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠী বিশেষ করে খাসি অধিবাসী দুর্গত ও প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাস করেন। তাদের বিভিন্ন সমস্যা উপলব্দি করে ইতিমধ্যে ১৩টি ব্রীজ, ৭টি সিঁড়ি, উপড়ে উঠার জন্য ৩টি আরসিসি ঢালাই রাস্তা, প্রত্যেক পুঞ্জিতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা, স্কুল ভবন, স্কুলের আসবাবপত্র, তাদের ভাষায় বই বিতরণ, বিদ্যালয়ে আসার জন্য ২৩০টি বাইসাইকেল বিতরণসহ উল্লেখযোগ্যসক কাজ করা হয়েছে এবং এগুলো অব্যাহত আছে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর এলাকায় ভৌতিক উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের জীবনমানের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে তাদের গুণগত মান উন্নয়নে সরকার উল্লেখযোগ্য কাজ করছে।

মৌলভীবাজার-৪ আসনের এমপি উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ জানান, ইতিমধ্যে এসব ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ললিতকলা একাডেমী স্থাপন, দুর্গম পাহাড়ে বিদ্যুৎ, পানির ব্যবস্থা ও পাকা রাস্তার করে দেয়া হয়েছে। কিছু এলাকা বাকী রয়েছে যা প্রক্রিয়াধীন। তাদেরকে বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-জাতীগোষ্ঠীর উপর তিনি গবেষণা করে পিএইচডি করেছেন বলে জানান তিনি। 

তিনি জানান, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ৩৭টি নৃ-গোষ্ঠীকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর প্রত্যেকটি জাতি গোষ্টির ঐতিহ্য রক্ষায় সরকার বদ্ধ পরিকর। 

আজ বিশ্ব আদিবাসী দিবসে শিক্ষার উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব ভূমি কমিশন চালুর দাবি খাসিয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি