ঠাকুরগাঁওয়ে মিলি চক্রবর্তী হত্যাকান্ডের মামলা সিআইডিতে হস্তান্তর
প্রকাশিত : ২২:১৭, ৯ আগস্ট ২০২১
ঠাকুরগাঁও শহরের চা ল্যকর মিলি চক্রবর্তী (৪২) হত্যাকান্ডের এক মাস পেরিয়ে গেলেও মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। তবে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করেছে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশ। এদিকে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে একটি মহল গোপনে তৎপরত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঠাকুরগাঁও সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) তানভীরুল ইসলাম বলেন, নিখুঁত তদন্তের স্বার্থে গত ৫আগস্ট সিআইডির কাছে মামলাটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সিআইডি'র ইন্সপেক্টর আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমরা ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি নজরে রেখেছিলাম। সঠিক একটি তদন্ত প্রতিবেদনের স্বার্থে মামলাটির দায়িত্ব নিয়েছে সিআইডি। আশা করি দ্রুতই এর সঠিক রহস্য বেরিয়ে আসবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের মোহাম্মদ আলী সড়কে নিজ বাসার পাশে একটি গলি থেকে মিলি চক্রবর্তী নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি শহরের তাতীপাড়া এলাকার সমীর কুমার ওরফে সোনার স্ত্রী। পরিবার থেকে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে কোনো মামলা বা অভিযোগ না করায় ঘটনার দুইদিন পর গত ১০ জুলাই ঠাকুরগাঁও সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নির্মল কুমার রায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গৃহবধূ সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তীকে কে বা কারা হত্যা করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তার মরদেহ শহরের তাঁতিপাড়াস্থ বাটা শোরুমের নির্মাণাধীন একটি ভবনের মাঝে সরু গলিতে ফেলে রাখে। প্রাথমিকভাবে এমন তথ্য পাওয়ার পর মৃতের পরিবারকে অভিযোগ দেয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু কোনো কারণে তারা অভিযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
মামলার বাদী এসআই নির্মল কুমার রায় বলেন, গৃহবধূ সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তীর লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাটি আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। মনে হয়েছে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে এবং ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য লাশ ওই স্থানে ফেলে রেখেছে। তাই সত্য ঘটনা উদঘাটনের জন্যই নিজে বাদী হয়ে মামলাটি করেছি।
এদিকে সুরতহাল রিপোর্ট করার সময় গৃহবধূর ডান হাতের কনুই থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত, বাম হাতের নিচের অংশ, দুই হাতের নখ, তালু, আঙ্গুল, পায়ের তালু, পায়ের আঙ্গুল ও বাম হাতের কবজির উপরে সুতা বাঁধা স্বাভাবিক পাওয়া যায়। তবে মাথার চুল খোপা বাঁধা, চোখের ভ্রুর চুল, চোখের পাতা আংশিক পোড়া ছিল। এছাড়া কোমড়ের নিচের অংশ থেকে পায়ের তালুর ওপরের অংশের বিভিন্ন জায়গায় পোড়ানো ছিল। কপালের চামড়া, জিহ্বা, ঠোঁট, থুতনি, কান, গলা, বুক, পেট, তলপেট ও ডান হাতের বাহু থেকে কনুই পর্যন্ত ও বাম হাতের কনুই থেকে কবজি পর্যন্ত এবং যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথ ঝলসানো পোড়া, প্রায় উলঙ্গ উপুড় হয়ে পড়ে অবস্থায় থাকা লাশটি পাওয়া যায়।
অন্যদিকে গৃহবধূর নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিলো এবং জিহ্বা বাহিরে দাঁত দিয়ে কামড়ানো অবস্থায় ছিলো। তার শরীরের বস্ত্রের ডান হাতের বাহুর জামার কিছু অংশ এবং দুই পায়ের হাঁটুর নিচে পায়জামার কিছু অংশ পোড়া অবস্থায় দেখা গেলেও পোশাকের বাকি অংশ পুড়ে ছাই হওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়।
নিহত মিলির পরিবার জানায়, সম্প্রতি শহরের এক ব্যক্তি মিলি চক্রবর্তীর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কিছু অপ্রীতিকর মেসেজ পাঠানোকে কেন্দ্র করে পরিবারে ঝামেলার শুরু হয়। ঘটনার দুইদিন আগে সেই মেসেজগুলো মিলির বড় মেয়ে দেখতে পেয়ে বাসার অন্য সদস্যদের জানায়। এরপর থেকেই কলহের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় লজ্জায় আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে দাবি মিলির পরিবারের।এছাড়া তার মানষিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা চলছিল এবং একটি ডায়রীতে তাঁর স্চ্ছোয় আত্মহত্যা লেখা পাওয়া গেছে।
তবে মিলির প্রতিবেশীসহ স্থানীয় অনেকেই বললেন, এ ঘটনার সঙ্গে হত্যাকান্ডের কোনো সূত্র থাকতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে মামলাটি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে একটি মহল তৎপর রয়েছে। অপরদিকে সম্মানের ভয়ে হয়তো মিলির পরিবার থেকে কোনো মামলা বা অভিযোগ করা হয়নি।
আরকে//
আরও পড়ুন