ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বৈধপথে মানব পাচারকারীরা সক্রিয়: ৭ বাংলাদেশির ভিসা বাতিল

জামাল হোসেন, বেনাপোল

প্রকাশিত : ১৮:৫৬, ১১ আগস্ট ২০২১

Ekushey Television Ltd.

মানব পাচারকারীরা সীমান্ত পথ ব্যবহার করলেও বর্তমানে বেনাপোলে বৈধপথে তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভালো কাজের প্রলোভনে গত এক মাসে এ পথে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কাজ করে চলেছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে। এসময় সন্দেহজনক এমন ৭ জনের ভিসা বাতিল করে ফেরত পাঠিয়েছে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন। তবে পাচার প্রতিরোধে ভারত অংশে ইমিগ্রেশনে বেশ কড়াকড়ি দেখা গেলেও বাংলাদেশ অংশে পাচারকারীরা ম্যানেজ করে অনায়াসে ওপারে যেতে পারছেন।

তবে বেনাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলছেন, সন্দেহ হলে তারাও জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকেন। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেহেতু যাচাই-বাছাই করে ভ্রমণের অনুমতি দিয়ে থাকে তাই অনেক সময় আইনগত জটিলতায় সন্দেহ হলেও আটকানো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

পাচার প্রতিরোধ সংস্থাগুলোর মতে, পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য কমাতে ভিসা প্রদান সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সীমান্তের ইমিগ্রেশনগুলোকে আরও সতর্কতা বাড়াতে হবে।

সূত্র জানায়, আগে মানব পাচারকারীরা সাধারণত এসব অসহায়দের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ নিতে সীমান্তের অবৈধ পথ ব্যবহার করত। বর্তমানে সীমান্ত পথ অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ায় বৈধপথ ব্যবহার করছে তারা। এক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে রুট হিসেবে বেশি ব্যবহার করছে বেনাপোল ইমিগ্রেশন আর ওপারের ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন। পরে ভারতে নিয়ে সেখান থেকে পাঠাচ্ছে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। গত দেড় বছর ধরে করোনার মহামারিতে সরকারের নানা বিধি-নিষেধে ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসা বন্ধ থাকায় পাচারকারী সিন্ডিকেট অনেকটা বেকায়দায় পড়লেও আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বৈধপথই বেঁছে নিচ্ছে ভারতে। এক্ষেত্রে ভিসা ও ভ্রমণ অনুমতির সঙ্গে জড়িত এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মেডিকেল ভিসাও সংগ্রহ করছে তারা। পরে তাদের পছন্দের রুট বেনাপোল দিয়ে পাঠাচ্ছে ভারতে। এ সীমান্তে পাচার কাজে তারা শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করেছে।

অভিযোগ রয়েছে এসব সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গে দুইপারের ইমিগ্রেশনের রয়েছে গভীর সখ্য। বেশ কয়েক বছর আগে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে একজন নিহতের ঘটনা এবং চেকপোস্ট দিয়ে মানব পাচারের অভিযোগ কেন্দ্রে পৌঁছালে কড়াকড়ি আরোপ করে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন। এরপর থেকে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন এলাকায় অবৈধ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এখনও সে অবস্থা চলছে। ফলে মানবপাচারে সহযোগী সিন্ডিকেটের সদস্যরা সুবিধা করতে পারে না। তবে বাংলাদেশ অংশে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে সাইন বোর্ডে সাধারণদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা লেখাসহ নানান সতর্কবাণী থাকলেও হরহামেশায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন পরিচয়ে প্রবেশ করছেন ইমিগ্রেশন ভবনে। পরে বিদেশে কাজের প্রলোভনে নেওয়া এসব যাত্রীদের তারা ওপারে পাঠাতে সহযোগিতা করছে।

গত ২৮ জুলাই ভারতে তিন বছর জেল খেটে বেনাপোল ইমিগ্রেশন হয়ে ট্রাভেল পারমিটে দেশে ফেরেছে ১০ বাংলাদেশি। এদের মধ্যে ৪ জনকে মালায়েশিয়া পাঠাতে দালালরা ভারতে নিয়েছিল। পরে বেঙ্গোলোর বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের হাতে আটক হয় জানান, ফিরে আসা একজন ভুক্তভোগী শাকিল নামে এক ব্যক্তি।

মানব পাচার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা এনজিও সংস্থা রাইটস যশোর-এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক জানান, পাচারের শিকার যাদের উদ্ধারের পর ফেরত আনা হয়। এরা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন সহযোগিতা মেলে না। ফলে পাচারকারীরা পার পেয়ে যাওয়ায় দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে তারা।

এনজিও সংস্থা জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার এর যশোরের এরিয়া ম্যানেজার এবিএম মুহিত হোসেন জানান, ভারতে পাচারের শিকার হওয়া যেসব নারী-পুরুষকে তারা ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে ফেরত আনেন। এদের অনেকেই নেওয়া হয়েছিল বেনাপোল ইমিগ্রেশন হয়ে ভারতে। পাচারকারীরা ভারতে নেওয়ার আগে তাদের এমনভাবে শিখিয়ে নেয় যে তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে যে তারা পাচারের শিকার হতে যাচ্ছে।

পরে কাউকে পাচার করে নেওয়া হয় ভারতে আবার কাউকে ভারত থেকে মালায়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে এক্ষেত্রে ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কড়াকড়িতে সেখানে আটক হয় বেশি বলেও জানান তিনি।

পাচার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা ব্র্যাকের সিনিয়র জেলা ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম জানান, পরিসংখ্যন মতে প্রতিবছর সীমান্ত পথে ভারতে ৫০ হাজার নারী, শিশু ভালো কাজের প্রলোভনে পাচার হচ্ছে। যাদের বড় একটি অংশ যশোর সীমান্ত পথে ভারতে নেওয়া হয়। যে পরিমাণ পাচারের শিকার হয় তার মাত্র ৫ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পাচার প্রতিরোধ করতে গেলে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আরও কঠিন ভূমিকা পালন করতে হবে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব জানান, গত এক মাসে বেনাপোল ইমিগ্রেশন হয়ে ভারতে যাওয়ার পর ভারতীয় ইমিগ্রেশনে সন্দেহভাজন ৭ বাংলাদেশিকে ঢুকতে না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। এরা মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারতে যাচ্ছিল। তাদের বিষয়ে আমরা ডায়েরি এন্টি করেছি। এরা ভারত ভ্রমণের বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে না পারাই তাদের ফেরত পাঠিয়েছে। জানতে পেরেছি এরা অনেকেই ভারত হয়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য আসে। তবে এ পথে সন্দেহভাজন যাত্রীদের আমরাও জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকি। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশনার যেহেতু যাচাই-বাছাই করে ভ্রমণের অনুমতি দিচ্ছে তাই অনেক সময় আইনগত জটিলতায় সন্দেহ হলেও আটকানো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। 
কেআই//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি