চাঁপাইনবাবগঞ্জে সুপেয় পানি সংকটে চরম দুর্ভোগে বন্যার্তরা
প্রকাশিত : ১৮:৪২, ১৬ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ২১:৫৫, ১৯ আগস্ট ২০২১
পদ্মা নদীর উজানে গঙ্গা নদীর ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশই অবনতি হচ্ছে। জেলার দেড় লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় সুপেয় পানি ও খাদ্যসামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। বুধবার পাঁকা ইউনিয়নের বন্যাকবলিত ২০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। বৃহস্পতিবারও বন্যার্তদের মাঝে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পৌঁছে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এসব খাদ্যসামগ্রী ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সহায়তা দেয়া হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা ও মহানন্দায় পানি বেড়েছে ১০ সেন্টিমিটার। পানি বেড়ে পদ্মায় ১৭ সেন্টিমিটার ও মহানন্দায় ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মায় দ্রুত গতিতে পানি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পাউবো বলছে, ফারাক্কার অনেকগুলো গেট খুলে দেয়ায় এমনটা হয়েছে। প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি ও সবজিক্ষেত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাগঞ্জের নদী-তীরবর্তী বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চলের অসংখ্য বাড়িঘর, হাট-বাজার, রাস্তাঘাটসহ নিম্নাঞ্চলসমূহ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার ধান, শাকসবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের জমি। গ্রামীণ সড়ক ডুবে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যোগাযোগব্যবস্থা। এতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর এবং শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের পরিস্থিতি ভয়াবহ। এসব ইউনিয়নের বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শাজাহানপুর, নারায়ণপুর, আলাতুলি, চড়বাগডাংগা ও শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর, পাকা ও উজিরপুর ইউনিয়ন।
নারায়ণপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে যাতায়াতের রাস্তা ডুবে গেছে। গ্রামের মানুষ রান্নাবান্নার কাজ করতে পারছেন না। শুকনো খাবার সংগ্রহ করে তাদের খাবারের চাহিদা মেটাচ্ছে। টিউবওয়েলও পানির নিচে। জমানো কিছু পানি ছিল সেটা দিয়েই চলছে। সবকিছু নিয়ে বড় বিপদে আছি।
তিনি আরও জানান, আমাদের এসব এলাকা ৯ দিন ধরে ডুবে আছে। এ কারণে বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন বানভাসিরা। বন্যার পানি দিয়ে চলছে থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ। খাবার পানি সংগ্রহ করছেন দূর থেকে, যদিও তা সবসময় পাওয়া যায় না।
পাঁকা ইউনিয়নের গৃহিণী জমিলা খাতুন জানান, খাওয়ার পানি নেই। তাই কলার ভেলায় করে উঁচু জায়গার নলকূপের পানি আনতে হচ্ছে। অনেক সময় ভিড় থাকায়, পানি সংগ্রহ করতে কষ্ট হয়। বন্যায় আমাদের দুটি ঘর ডুবে গেছে।
আলাতুলি এলাকার গরু খামারি সাহাবুদ্দিন। তিনি তার খামারের ৫০টি গরুর খাবার জোগাড় নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন। বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে, আমরা কোথাও যায়নি। কিন্তু বাড়ির পাশেই একটা উঁচু জায়গা ছিল, সেখানে আরেকটু মাটি তুলে গরুগুলোকে রেখেছি। একদিকে গরু চুরির ভয় আরেক দিকে গরুর খাবার সংকট, সব মিলিয়ে কঠিন সময় পার করছি।
শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দীন জানান, পাঁকা ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। ইউনিয়নের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, বাজার ও রাস্তা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। ফসলের জমি ও সবজিক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। এছাড়া গবাদিপশু নিয়ে এ এলাকার মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল-রাব্বি জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বেশকিছু এলাকা ডুবে গেছে। দিনদিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বুধবার পাঁকা ইউনিয়নের ২০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে। প্রতিনিয়িত বন্যাকবলিত এলাকার খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদি হাসান বলেন, ভারত ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ায় দ্রুত পানি আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ সেন্টিমিটার। বর্তমানে পদ্মায় বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় মহানন্দায় ১০ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরকে//
আরও পড়ুন