আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেনের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রকাশিত : ১২:১২, ১৮ আগস্ট ২০২১
আজ ১৮ আগস্ট বহুল আলোচিত নওগাঁর আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেনের ২১তম মৃত্যু বার্ষিকী। ২১ বছর আগে সরেন ভূমি দস্যুদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। এখনও ওই মামলার কোন সুরাহা হয়নি। বিচারের অপেক্ষায় কেটে গেল ২১ বছর, ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিয়ে আদিবাসীরা রয়েছে সংশয়ে।
তাদের অভিযোগ, জামিনে থাকা আসামীদের অব্যাহত হুমকী-ধমকীতে ইতোমধ্যে অনেক আদিবাসী পরিবার নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লী ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে যে ক’টি পরিবার এখনো বসবাস করছে তারা ভূমিদস্যুদের ভয়ে জমিতে চাষাবাদ করতেও পারছেনা। ফলে পরিবারগুলো চরম অভাব অনটন ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে।
সাক্ষীরা পল্লীর ছেড়ে যওয়ায় মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলার বাদী আলফ্রেডের ছোটবোন রেবেকা সরেন।
আলফ্রেড সরেন হত্যাকান্ডের এক বছরের মাথায় তার মা ঠাকুরানী সরেন মৃত্যু বরন করেন। বৃদ্ধ বাবা গায়না সরেনও মারা গেছেন। আলফ্রেড সরেনের স্ত্রী জোছনা সরেন এই পল্লীতে থাকেন না। আলফ্রেডের রেখে যাওয়া ৪ বছরে মেয়ে ঝর্ণা সরেন বড় হয়ে বিয়ে করে থাকছেন ঢাকায়। চাকরি করছেন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে।
উল্লেখ্য গত ২০০০ সালের ১৮ আগস্ট নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে হাতেম-গদাই গংদের হামলায় আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন নৃসংশভাবে খুন হন। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে আদিবাসী পল্লীর ১১টি পরিবারের বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময় তাদের হামলায় আদিবাসী মহিলা-শিশুসহ প্রায় ৩০ জন মারাত্মক আহত হয়।
ওই সন্ত্রাসী ঘটনার পর নিরাপত্তার জন্য সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হলেও পরে তা গুটিয়ে নেয়া হয়।
এ মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মহসীন রেজা জানান, আলফ্রেড সরেন হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই কমল সরেন ও ছোট বোন রেবেকা সরেন বাদী হয়ে হত্যা ও জননিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশ ৯১ জন আসামীর নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এর মধ্যে পুলিশ কয়েকজন আসামীকে গ্রেফতার করে।
ওই সময় নওগাঁ দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষী গ্রহণ শুরু হয় এবং ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে সেই সময় ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল। ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জননিরাপত্তা আইন বাতিল করে। ওই সময় আসামীরা জননিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করলে রিট হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেয়। এরপর আসামীরা জামিনে বেরিয়ে আসে।
এরপর বাদিগণ অ্যাপিলেড ডিভিশনে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলাটি অ্যাপিলেড ডিভিশন পূর্ণাঙ্গ শুনানীর জন্য হাইকোর্ট ডিভিশনে প্রেরণ করেছে। বর্তমানে মামলাটি হাইকোট ডিভিশনে শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে। দ্রুত শুনানী করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী।
নিহত আলফ্রেড সরেনের ছোটভাই মহেশ্বর সরেন বলেন, আসামীরা এখনও আমাকে হত্যার হুমকী দিচ্ছে। ৬৩ বিঘা জমির মধ্যে ৩৩ বিঘা জমি তারা নিয়ে নিয়েছে। বাকী ৩০ বিঘা জমিও হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। আমার ভাই হত্যার পর আদিবাসীরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে কিন্তু এখনও বিচার পাইনি। অথচ আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সবিন মুন্ডা জানান, এতসব আশংকার মধ্যেও আজ ১৮ আগস্ট পালিত হবে নিহত আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেনের ২১তম মৃত্যু বার্ষিকী। এ উপলক্ষে বেলা ১১টায় ভীমপুরে আলফ্রেড সরেনের সমাধীতে পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে ১ মিনিট নিরবতা পালন, সমাধী প্রাঙ্গণে শোক সভার আয়োজন করা হয়েছে।
জেলা আদিবাসী ইউনিয়ন, কমিউনিষ্ট পাটি বাংলাদেশ (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল এবং নিহতের পরিবারের সরেনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী শেষে শোক সভায় অংশগ্রহণ করবেন বলে জানান সবিন মুন্ডা।
এএইচ/
আরও পড়ুন