মোড়েলগঞ্জে ইউএনওর উদ্যোগে সরকারি সড়ক দখলমুক্ত
প্রকাশিত : ১৩:২৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১৭:১৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
সেই দেয়াল ভেঙে ফেলার দৃশ্য
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের কিসমত জামুয়া গ্রামে এক কিলোমিটার ইট সোলিং সড়কের প্রবেশ মুখে দেয়াল তুলে জনসাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি মাদকচক্রের বিরুদ্ধে। তবে সেই দেয়াল ভেঙে পাকা রাস্তাটি দখলমুক্ত করেন ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর আলম। সরকারি ইট তুলে ফেলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ আছে, আসমা নামে এক স্বামী পরিত্যক্তা নারী তার বাড়িতে মাদকের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। স্থানীয় বেশ কিছু বখাটের যাতায়াত রয়েছে তার বাড়িতে। সেইসঙ্গে ঐ গ্রামে সুদের কারবারি হিসেবে পরিচিত তার ভাই হাফেজ ও হাবিব।
জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রায় ৩০ বছরের পুরনো সরকারি ওই সড়কের প্রবেশমুখে প্রথমে টিন দিয়ে বেড়া দেয় আসমা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। পরে বলবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান খান ঐ টিনের বেড়া উচ্ছেদ করে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করেন। পরে গত ৩১ আগস্ট রাতের আধারে পাকা রাস্তার প্রবেশ মুখে ফের ইট দিয়ে দেয়াল তৈরি করে জন সাধারনের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেয়াল তৈরির জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে আসে আসমা। স্থানীয় কয়েকজন ঐ রাস্তায় দেয়াল নির্মাণে বাধা দিলে তাদেরকে ইট নিয়ে তাড়া করা হয় এবং হত্যারও হুমকি দেয় তারা।
এরই জেরে গত ৪ সেপ্টেম্বর সকালে ঐ রাস্তার ওপরই ভবন তৈরির কাজ শুরু করে আসমা এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনী। পরে গ্রামবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ঐদিন বিকেলেই ঘটনাস্থলে আসেন মোড়েলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম। তাৎক্ষণিক দেয়াল ভেঙে পাকা রাস্তাটি দখলমুক্ত করেন তিনি। সরকারি ইট তুলে ফেলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউএনও। তিনি জানান, সরকারি সড়কে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা চলবে না।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারাই আসমাকে সরকারি রাস্তা এভাবে দখল না করার অনুরোধ করতেন, তাদেরকে ধর্ষণসহ নানা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হতো। আর গত ৩১ আগস্ট, অপকর্মের প্রতিবাদ করায় আপন বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে বেধড়ক পিটিয়েছে আসমা বাহিনী। ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হত্যাচেষ্টাও চালানো হয় ঐ নারীকে। দুই-হাত, মুখ এবং পিঠে মারাত্মক জখম নিয়ে ঐ নারী এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ নারীর এক স্বজন জানিয়েছেন, নিপীড়নে গুরুতর আহত হওয়ার ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা নিতে গড়িমসি করে পুলিশ।
আহত নারীর বড় ছেলে বর্তমানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিনি জানান, শেষমেষ উপায় না পেয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপারকে জানানোর পর তিনি মোড়েলগঞ্জ থানাকে দ্রুত মামলা নেয়ার নির্দেশ দেন। ঘটনার ৫ দিন পর এসপির নির্দেশ থানা থেকে ঐ নারীর জবানবন্দি নিতে হাসপাতালে যান এক পুলিশ সদস্য।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিপুল পরিমাণ ঘুষ দিয়ে থানা পুলিশকে আগেই হাত করেছেন আসমা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। মাদক সেবকদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে আসমার বাড়িতে। এর আগে কয়েকবার এদের অপকর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। বরং অভিযোগকারীদেরই উল্টো হয়রানি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, নিজ বাবা আইয়ূব আলী খাঁ এবং নিজ স্বামীকেও মারধরের অভিযোগ আছে আসমার বিরুদ্ধে। সৌদি ফেরত আসমার দ্বিতীয় স্বামী দুলাল মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্য বলেও দাবি এলাকাবাসীর। মানবপাচারের মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি।
এলাকাবাসী জানায়, বর্তমানে যেখানে আসমার ঘর, এই জমিটি অন্য আরেক ব্যক্তির। ৬/৭ বছর আগে আসমার বাবা ঐ ব্যক্তির জমিটি এওয়াজ বদল করে দখলে নেন। আর পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সে জমিতে পরে ঘর তোলেন আসমা।
গ্রামবাসীর দাবি, রাস্তাটি পাকা হয়েছে প্রায় ২০ বছর। যখন এটি পাকা হয় তখন এর পাশে কোনো বাড়ি-ঘর ছিলো না। আসমা বাড়ি করার পর সড়কে থাকা ইটগুলো একে একে উধাও হয়ে যায়। স্থানীয়রা জানায়, সরকারি সড়কের ইট তুলে নিজ বাড়ির বাথরুম এবং গরু ঘরে দিয়েছে আসমা।
উল্লেখ্য, স্থনীয় আমবাড়িয়া ব্রিজ পার হয়ে কিসমত জামুয়া গ্রামে মনসুর খার বাড়ি হয়ে বর্তমানে এ সড়ক পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার পিচঢালাই সড়ক নির্মাণে গেলো বছরই সুপারিশ করেছেন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মিলন।
এনএস//
আরও পড়ুন