ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আরিফা-সুহানার ‘অক্সিজেন কন্যা’ হওয়ার গল্প 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:০০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

করোনার থাবায় পড়েছে পুরো দেশে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে মৃত্যুর খবর। আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। দেশের অন্যান্য এলাকার মতো রংপুরেও আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। কেউ কেউ শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। প্রয়োজন পড়ছে অক্সিজেনের। 

সেই অসহায় মানুষদের পাশে সহায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন রংপুরের তরুণী আরিফা জাহান (২৩)। তিনি দরিদ্র ও অসহায় করোনা রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন। 

সম্প্রতি এ নিয়ে আরিফা জাহানের সঙ্গে কথা হলে জানান, তিনি নারীদের ক্রিকেট প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তার ডাক নাম ‘বীথি’। করোনায় মানুষের অসহায়ত্ব ও দুর্দশা দেখে নিজের নানা টানাপোড়েন থাকা সত্ত্বেও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তার বাড়িতেও দুই বেলা খাবার জোটে না। নিজের পরিবারে অভাব-অনটন থাকার পরও খবর পাওয়া মাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে চলা থেমে নেই আরিফার।

উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর পারিবারিকভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয় আরিফার। বিয়ের দিন বধূ সেজে বসে থাকলেও বর না আসায় বিয়েটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। এরপর তার জীবনের গল্প পাল্টে যেতে শুরু হয়। আরিফা হয়ে ওঠেন দক্ষ ক্রিকেটার। ঢাকায় প্রিমিয়ার লিগও খেলেছেন। পরে অসুস্থতার কারণে তার খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাকে ফিরে আসতে হয় রংপুরে। 

আরিফা রংপুরে শুরু করলেন মেয়েদের জন্য বিনা পয়সায় ক্রিকেট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। মেধাবী ও অসচ্ছল মেয়েদের ক্রিকেট শেখাতেই তার উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠা করলেন একটি ক্রিকেট একাডেমি। নাম দিলেন ‘উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি’। আরিফার হাত ধরে এখন প্রায় ২৫০ জন মেয়ে ক্রিকেটার হাতেখড়ি নিয়েছেন।

করোনা পরিস্থিতিতে আরিফার ক্রিকেট প্রশিক্ষণ বর্তমানে বন্ধ আছে। এই ফাঁকে তিনি সুবিধাবঞ্চিত করোনা রোগীদের সেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করলেন। অসহায় করোনা রোগীদের তালিকা তৈরি করলেন। একই সঙ্গে দরিদ্র করোনা রোগীদের সহায়তার জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এতে তিনি ব্যাপক সাড়া পেলেন। 

আরিফা বলেন, প্রথমে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিল যে কীভাবে কী করবো। কিন্তু কাজটা শুরু করে দিলে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। শত টানাপোড়েনের মধ্যেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। 

জানালেন, বিষয়টা জানার পর অনেকে তাকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেন। আরিফা তৈরি করলেন সিলিন্ডার ব্যাংক। সেখান থেকে অসহায় করোনা রোগীদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন এই তরুণী। বললেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ জনকে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছি। 

আরিফার অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবা পেয়েছেন শহরের ধাপ কটকিপাড়ার বাসিন্দা এস এম ওসমান গণি (৬২)। করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। তাকে ৩০ জুলাই অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়। 

ওমসান গণি বলেন, ‘এভাবে এত সহজে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাব, ভাবতেই  চোখে পানি আসে। আমি তার (আরিফার) মঙ্গল কামনা করি।’

মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে আরিফা জাহান বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা নিতান্তই খুব কষ্টে আছেন, দেখার কেউ নেই, কিংবা দরিদ্র-এমন লোকজনদের অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। আমার স্বেচ্ছাসেবী এই কাজের সঙ্গে অনেকেই যুক্ত হয়েছেন। অনেকের মানসিক সমর্থনও রয়েছে। যারা আমায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন এই কাজটি চালিয়ে যেতে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। 

‘জরুরি প্রয়োজনের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সব সময় মজুত থাকছে। কল  পেলেই সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।’ 

আরিফার বাড়ি রংপুর শহরের নূরপুর এলাকায়। তার বাবার নাম মফিজুল ইসলাম। স্থানীয় একটি তেল পাম্পে চাকরি করলেও এখন বাসাতেই আছেন। মা মাজেদা বেগম গৃহিণী। বড় ভাই অটোরিকশা চালান। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছোট ভাই স্থানয়ী একটি সংস্থার স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ছে। 

এদিকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে আরিফা জাহানের মতো ঢাকায় আক্রান্তদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহের কাজ করছেন শেখ সুহানা ইসলাম। 

ঢাকার পান্থপথের বাসিন্দা সুহানা ইসলাম পেশায় একসময় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হলেও সেটি ছেড়ে গত কয়েক বছর স্বেচ্ছাসেবী নানা কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন।

সুহানা ইসলাম বলেন, যারা হাসপাতালে যেতে পারছে না আমরা সেই সব  রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট দিচ্ছি। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা জোগাড় করে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে সরবরাহ করা হচ্ছে। 

আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই বলছেন, যখন হাসপাতালে কোন সিট খালি নেই, তখন ওই কঠিন দুঃসময়ে এই সেবা অনেকের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে।

আর এ অবস্থায় ইচ্ছা থাকলে যে উপায় হয়- আরিফা জাহান ও সুহানা ইসলাম এর উৎকৃষ্ট উদহারণ। অনেকের জন্য তাদের এই সমাজকল্যাণমূলক কাজ অনুসরণীয় ও দৃষ্টান্তও বটে। 
সুত্র: বাসস
এমএম/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি