কলারোয়ার আলোচিত ৪ খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ
প্রকাশিত : ১৩:০৫, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১৪:২৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
মৃত্যুদণ্ডের আসামী রায়হানুরকে আদালত থেকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
সাতক্ষীরার কলারোয়ার আলোচিত একই পরিবারের স্বামী, স্ত্রী ও তাদের দুই শিশু সন্তানসহ চারজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা মামলার একমাত্র আসামী রায়হানুর রহমানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের পিপি এড. আব্দুল লতিফ।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক শেখ মফিজুর রহমান জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডের আদেশপ্রাপ্ত আসামী রায়হানুর রহমান কলারোয়া উপজেলার খলিসা গ্রামের শাহজাহান ডাক্তারের ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের শাহজাহান ডাক্তারের বড় ছেলে শাহীনুর রহমান আট বিঘা জমিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করতেন। মেঝ ছেলে আশরাফ আলী মালয়েশিয়ায় থাকেন। ছোট ছেলে রায়হানুর রহমান বেকার। বেকারত্বের কারণে বড় ভাই শাহীনুরের সংসারে সে খাওয়া-দাওয়া করতো। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সংসারে টাকা দিতে না পারায় রায়হানুরকে মাঝে মাঝে গালমন্দ করতেন শাহীনুরের স্ত্রী সাবিনা খাতুন।
এরই জের ধরে ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে ভাই মোঃ শাহীনুর রহমান (৪০) ভাবী সাবিনা খাতুন (৩০), তাদের ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহী (১০) ও মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তাসমিন সুলতানাকে (৮) কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের বড়ি খাওয়ায় রায়হানুর। পরদিন ১৫ অক্টোবর ভোর চারটার দিকে হাত ও পা বেঁধে তাদেরকে একে একে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এসময় হত্যাকারী রায়হানুর ওই পরিবারের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে না মেরে লাশের পাশে ফেলে রেখে যায়।
একই পরিবারের এই চারজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে আসামী রায়হানুর
এ ঘটনায় নিহত শাহীনুর রহমানের শ্বাশুড়ি ময়না খাতুন বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে ১৫ অক্টোবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। রাতেই মামলাটির তদন্তভার সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়।
মামলার তদন্তে নেমে সিআইডির সাতক্ষীরা অফিসের পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম সন্দেহজনক আসামী হিসেবে শাহীনুরের ভাই রায়হানুরকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত রায়হানুরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ২১ অক্টোবর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিলাস মণ্ডলের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
তদন্তভার গ্রহণের এক মাস আট দিন পর ২৮ জনের সাক্ষী ও রায়হানুরের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা রায়হানুরকে একমাত্র আসামী করে ৩২৮ ও ৩০২ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পরবর্তীতে দায়রা জজ আদালত মামলার ১৮ জন সাক্ষীর ও একজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। গত ২২ আগস্ট উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে সাতক্ষীরার দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক শেখ মফিজুর রহমান আসামীপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষে ২৯ আগস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। কিন্তু বিচারক ছুটিতে থাকায় ওই দিন রায় ঘোষণা করা হয়নি।
১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সাতক্ষীরার দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক শেখ মফিজুর রহমান মামলার সাক্ষী ও প্রয়োজনীয় নথি পর্যালোচনা শেষে আসামী রায়হানুর রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে আসামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আগামী ৭ দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন আসামী।
এএইচ/
আরও পড়ুন