জয়পুরহাটে শিশু ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে তোলপাড়
প্রকাশিত : ১৭:১২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১৭:১৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
জয়পুরহাটের কালাইয়ে ১১ বছরের এক শিশুকে তার বাড়ীতে বাবা-মার অনুপস্থিতিতে জহুরুল ইসলাম (৩৮) নামে এক সিএনজি চালক ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের মাস্তর চান্দারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত যুবক একই গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে।
এদিকে, মিমাংসা করে দেয়ার নামে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওইদিন রাতেই শালিশের আয়োজন করেন গ্রাম্য মাতবররা। শালিশে ওই শিশুর পরিবারের লোকজন উপস্থিত হলেও অনুপস্থিত ছিল অভিযুক্ত। অবশেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে গুরুত্বর আহত শিশুকে প্রথমে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান পরিবারের লোকজন। ওই রাতেই চিকিৎসকরা ওই শিশুকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে জহুরুল ইসলামকে আসামি করে কালাই থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
প্রতিবেশী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বাবা একজন টিনের ঘর ছাউনির মিস্ত্রি। শুক্রবার সকাল থেকে নিজ গ্রামেই অন্যের বাড়ীতে টিনের ঘর ছাউনির কাজ করছিলেন তিনি। দুপুরের দিকে শিশুটির মা তাকে বাড়ীতে রেখে স্বামীর কাছে যায়। আর সুযোগ বুঝে সিএনজি চালক জহুরুল ইসলাম বাড়ীতে প্রবেশ করে ওই শিশুর মুখে কাপড় বেঁধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর বাবা ও মা বাড়ীতে এসে দেখতে পায় তাদের মেয়ে ঘরের ভিতর মেঝেতে পড়ে আছে। পরে ওই শিশুর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শুনে তাঁরা গ্রামের লোকজনকে জানান।
গ্রামের মাতবর ছফির উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, ছুমির ফকির, আলতাব হোসেন সরদার, আমিরুল খান ও ছাত্তার খান মিলে ওই শিশুর বাবা ও মাকে ওই ঘটনা জানাজানি করতে নিষেধ করেন এবং তারা সবাই মিলে রাতে শালিশ করে এ ঘটনা মিমাংসা করে দিবেন বলে আশ্বাস দেন। এরপর শিশুর বাবা স্থানীয় একটি ফার্মেসী থেকে কিছু ঔষুধ এনে ওই শিশুকে খাইয়ে দেন।
দিন শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে শালিশে বসেন গ্রামের মাতবররা। শালিশে শিশুর পরিবারের লোকজন উপস্থিত হলেও অনুপস্থিত ছিল অভিযুক্ত সিএনজি চালক জহুরুল ইসলাম। ওই ঘটনার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে বলেই জানা গেছে।
এদিকে, শালিশ না হওয়ায় ওই রাতেই পরিবারের লোকজন গুরুত্বর আহত শিশুকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে চিকিৎসকরা ওই শিশুকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ নুর আলম বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওই শিশুকে রাতেই জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মামলার বাদী ও ধর্ষিত শিশুর বাবা বলেন, কাজ শেষে দুপুরে বাড়ীতে এসে দেখি আমার মেয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। মেয়ের কাছ থেকে শুনে আমি গ্রামের লোকজনদের এ ঘটনা জানাই। মাতবররাসহ গ্রামের অনেকেই বলে, এ ঘটনা বেশী জানাজানি করা যাবে না। রাতে বসে দুই পক্ষকে নিয়ে মিমাংসা করে দেওয়া হবে। থানা ও হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু শালিশ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে রাতেই মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যাই এবং পরে জহুরুলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করি।
প্রতিবেশী আলমগীর হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতে মাতবররাসহ গ্রামের আরও বেশকিছু লোকজন মিলে শালিশে বসেছিল। কিন্তু জহুরুল না আসায় শালিশ হয়নি। পরে আমিসহ ওই শিশুর বাবা-মা ও গ্রামের অন্য লোকজন মিলে হাসপাতালে গিয়ে ওই শিশুকে ভর্তি করেছি। ঘটনার পরই শিশুর বাবা ও মা থানায় যেতো কিন্তু মাতবরদের নিষেধের কারণে তখন যায়নি। অথচ রাতে ঠিকই আসতে হলো। আসলে যে কোনো কাজে মাতবররা নাক গলায়।
ওই গ্রামের মাতবর হেলাল উদ্দিন বলেন, ওই ঘটনা মিমাংসার জন্য রাতে আমরা সবাই মিলে শালিশে বসেছিলাম। অভিযুক্ত জহুরুল না আসায় শালিশ হয়নি। পরে আমরা সবাই মিলে ওই শিশুর পরিবারের লোকজনকে থানার আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি। তাই ওরা রাতেই থানায় গিয়ে মামলা করেছে। জহুরুল এই ঘটনার আগেও ৪-৫ বার একই কাজ করেছে। ওর শাস্তি হওয়া দরকার।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় ওই শিশুর বাবা বাদী হয়ে একজনকে আসামি করে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
শুক্রবার রাতে গ্রামের মাতবররা ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিমাংসার জন্য শালিশে বসেছিল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি শালিশে বসে থাকে তাহলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএস//
আরও পড়ুন