ঢাকা, রবিবার   ১৩ অক্টোবর ২০২৪

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কলেজের গাছ কাটার অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২১:১১, ৯ অক্টোবর ২০২১

নওগাঁর ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজ ক্যাম্পাসের প্রায় লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৪০টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রাতের আঁধারে গোপনে কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। একজন কলেজ শিক্ষকের নেতৃত্বে গত কয়েকদিনে রাতের আধারে এসব গাছ কাটা হয়েছে। এই গাছ কেটে বিক্রির সাথে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ আরও কযেকজন শিক্ষক জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। 

বিষয়টি জানার পর গতকাল শনিবার দুপুরে ওই কলেজ ক্যাম্পাসে গেলে দেখা যায় তড়িঘড়ি করে কাটা গাছের গড়া মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। আবারো কোন স্থানে নতুন করে গাছের চারা লাগানো হয়েছে। তবে গাছকাটার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক নাসির উদ্দিন গাছ কাটার কথা স্বীকার করে বলেন আমার নিজ ইচ্ছায় গাছ কাটিনি। ম্যানেজিং কমিটির ২/৩ জন সদস্যের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা হয়েছে। এদিকে গোপনে কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ কাটার বিষয় নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচানা শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় ক্যাম্পাসের পতিত জমিতে প্রচুর পরিমাণে বনজ জাতীয় বৃক্ষরোপন করা হয়। বর্তমান গাছগুলোর বয়স প্রকারভেদে ১৫-২০ বছর হয়েছে। অনেক গাছ পরিপূর্ণতা পেয়েছে। বৃক্ষরোপনের জন্য ওই কলেজের অধ্যক্ষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন। বর্তমানের কলেজের চারিদিকে সুবির্স্তৃত সীমানা প্রাচীন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবত প্রতি রাতে কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক মো. নাসির উদ্দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটিকে না জানিয়ে প্রায় ৪০টির মতো আকাশমনি ও ঘোড়ানিম জাতীয় গাছ কেটে নিয়ে যায়। গাছ কাটার পর গাছের গোড়া মাটি দিয়ে ডেকে দেয়।

ওই কলেজের নৈশ প্রহরী ওহেদুর ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে গাছকাটা হতো এবং সকাল হওয়ার আগেই সেগুলো স-মিলে চলে যেত। কলেজের প্রধান গেটে তালা থাকার পর কিভাবে লোকজন ক্যাম্পাসে ঢুকে গাছ কাটলো এমন প্রশ্নের জবাবে ওহেদুল আরও বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্যারের অনুমতিতে প্রতিদিন চাবি দিয়ে গেট খুলে দেওয়া হতো।  এদিকে কলেজের এলএলএস এস ওয়াজেদ বলেন আমি অবশ্য গাছের ডালপালা ১ হাজার টাকায় ক্রয় করেছি। 

গতকাল শনিবার দুপুরে ওই কলেজ ক্যম্পাসে স্থানীয় সাংবাদিকরা গিয়ে দেখতে পান সেখানে কাটা গাছের শেকড়ের অংশ। ঘটনা ধামাচাপা দিতে মাটি দিয়ে গাছের গোড়াগুলি ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও কাটা গাছের গোড়ায় রোপন করা হয়েছে আমের চারাও। 

এদিকে গাছ কাটার পর সেগুলো ভ্যানযোগে স্থানীয় দুটি স মিলে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। সেই স মিল গুলোর মধ্যে স্থানীয় মৌসুমী ছ মিলের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বিদ্যুৎ জানান, তার মিলে ভ্যানযোগে প্রায় এক সপ্তাহ আগে ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক নাসির উদ্দিন বিক্রির উদ্দেশ্যে ২১টি গাছের গুল (গাছের দেহ) নিয়ে আসে। তার মধ্যে ১৪টি আকাশমনি গাছের গুল ইতোমধ্যে তিনি বিক্রি করেছেন। বাকি ৬টি ঘোড়ানিম গাছের গুল মিলে রয়েছে। 

এব্যাপারে প্রভাষক মো.নাসির উদ্দিন বলেন,কলেজ পরিচালনা পর্ষদের মৌখিক আদেশ মোতাবেক কলেজের নতুন সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন এবং পতিত জমিতে আম্রপালী আম গাছ লাগালোর জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আম গাছ লাগানোর জন্য গাছের সারি সোজা করতে কয়েকটি গাছ কেটেছি। গাছ ও খড়ি বিক্রির ৩ হাজার ৯'শ টাকা আমার কাছে রক্ষিত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক গাছ কাটার বিষয় জানেন। তারাও এ সাথে জড়িত। 

ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ অবসরে গেলে আমি সবেমাত্র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। পূর্বের অধ্যক্ষের নিকট থেকে কলেজের প্রধান ফটকের চাবি নিয়েছিল শিক্ষক নাসির উদ্দিন। গাছ কাটার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। গাছ কাটার বিষয়ে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কলেজের সভাপতির সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ড. ইঞ্জিনিয়ার ফিজার আহমেদ বলেন, গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজের অতি পুরনো গাছগুলি কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। কিন্তু কোন প্রকার আলোচনা না করে নিজের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাতের বেলায় প্রায় ৪০টি গাছ কেটেছে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মো. নাসির উদ্দিন। এতে কলেজের প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওই শিক্ষক নিঃসন্দেহে নিগৃহীত কাজ করেছেন। দ্রুত গভর্নিং বডির সভা ডেকে বিষয়টি আলোচনা পূর্বক দোষী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেআই//
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি