ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আধুনিক প্রযুক্তিতে তিন বন্ধুর শিং মাছ চাষে সফলতা 

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:৩১, ১৬ অক্টোবর ২০২১ | আপডেট: ১৭:৪৪, ১৬ অক্টোবর ২০২১

Ekushey Television Ltd.

যশোরের শার্শা উপজেলায় তিন বন্ধু মিলে আধুনিক প্রদ্ধতি ব্যবহার করে দেশীয় শিং মাছের চাষ করছেন। যদিও মৎস্য অধিদপ্তর থেকে কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তারপর ও তাদের এই মাছ চাষ দেখে এলাকায় আরও অনেকে শিং মাছ চাষের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায়।  স্ব-শিক্ষিত ও বেকার তিন বন্ধু হলেন উপজেলার স্বরুপদাহ গ্রামের মৃত মতলেব বিশ্বাসের ছেলে  আফতাব হোসেন (৫০), শিবচন্দ্রপুর ওয়াপদাহ খাল পাড়ের বাসিন্দা মৃত রায়হান সর্দ্দারের পুত্র আব্দুর রশিদ (৪৫) ও মতিয়ার রহমানের ছেলে সোহাগ হোসেন (৩৫)।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৩২ শতাংশের পুকুরে শতাংশ প্রতি চার গ্রাম ওজনের শিং মাছের পাঁচ হাজার পোনা মজুদ করেন। দিনে দুইবার (সকাল ও রাতে) মাছের খাদ্য প্রয়োগ করেন। পুকুরের ভেতরে মাছের বিষ্ঠা পরিষ্কার করার জন্য রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন। সারাদিনের মাছের বিষ্ঠাগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানি থেকে তুলে ফেলা হয় এবং তা আবার ব্যবহার হয় জৈব সার হিসাবে। এই জৈব সার দিয়ে মাছের খামারের পাশে বিভিন্ন সবজির চাষও করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে শিং মাছ চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন শার্শার তিন বন্ধু। ঝুকিপূর্ণ শিং মাছের আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষ করার জন্য আগ্রহ সৃষ্টি করেছে তাদের বন্ধু আব্দুর রশিদ।

জানা যায়, তিন বন্ধুর মধ্যে আব্দুর রশিদ ভারতে থাকাকালীন তিনি মহারাষ্টের বেলাপুরে একটি বৃহত্তম মৎস্য হ্যাচারিতে ৫ বছর কর্মরত ছিলেন। সেখানে মাছের পরিচর্যার পাশাপাশি তিনি শিং মাছ চাষ করার প্রযুক্তি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকে এবং পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন। তারপর নিজেই শিং মাছ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তুু আব্দুর রশিদের পুজি না থাকাতে দুই বন্ধুর সহযোগিতায় তিন বন্ধু প্রথমে ১৫ কাঠার জমির একটি পুকুর লিজ নিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে পুকুর তৈরি করে মাছের রেনু পোনা ছাড়েন। এরপর কিছু দিনের মধ্যেই তারা মাছের জন্য খাদ্য তৈরি করার পরিকল্পনা করে খাবার তৈরি করা মেশিন  বানিয়ে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেশিন দ্বারা বয়লার ও পোল্ট্রি মুরগির নাড়ী, কেচো, শামুক, লবণ, খৈল, চিটা গুড় ও মধুর সংমিশ্রণে তৈরি করেন হাইপ্রোটিন জাতীয় মাছের খাদ্য। চরম অর্থ কষ্টের মাধ্যমে শুরু হয় তাদের সিং মাছ চাষের যাত্রা। তিন মাসে মাছের ওজন এক লাখে এক কেজি ছিল বর্তমানে ১০টি মাছে কেজিতে দাঁড়িয়েছে।

মাছ চাষি আব্দুর রশিদ জানান, সিং মাছ দুই থেকে তিন মাস পর পরিচর্যার ত্রæটির কারণে লেজ বাঁকিয়ে যায়। যে কারণে মাছের গ্রোথ আসে না। সিং মাছের চাষ যেই করুক না কেন পরিচর্যা না জানার কারণে সেই চাষি কখনই সফল হবে না। শার্শা মৎস অফিস থেকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমাদের সিং মাছ চাষ দেখে গেছেন এবং আমাদের কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। 

রশিদ আরো জানান, শিং মাছ চাষে কেউ সহযোগিতা পেতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে অবশ্যই আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিব।

তিন বন্ধু জানায়, শার্শা উপজেলায় শিং মাছের চাষ একেবারেই কম এবং চাষ পদ্ধতিও নতুন। কোন প্রকার সরকারী সহযোগিতা ছাড়াই স্ব-শিক্ষিত এই তিন বন্ধু চরম অর্থ কষ্টে ধার দেনা করে সিং মাছ চাষে ঝুঁকে পড়ে। সিং মাছের চাষ যারা করেছেন কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। তবে আমরা চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠিত হব ইনশাল্লাহ। আমরা এখানে ব্যাপক আকারে আধুনিক প্রযুক্তিতে দেশীয় শিং মাছ চাষ করতে চাই। কিন্তুু শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তি হলে সম্ভব না। অর্থেরও প্রয়োজন। তবে সরকার থেকে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হলে আমরা আরো সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারবো।

শার্শা উপজেলা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, আব্দুর রশিদসহ তিন বন্ধু মিলে স্বরুপদা গ্রামের ওয়াপদা খাল নামক স্থানে সিং মাছ চাষ করছেন শুনে আমি নিজে কয়েকবার দেখতে গিয়েছি। এ সময় সিং মাছ চাষের কারিগরি বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। সরকারি ভাবে যে সমস্ত সহযোগিতা করা যায়, আমি তাদেরকে আস্বস্থ করেছি এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। 
কেআই//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি