ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

নবান্ন উৎসবে জয়পুরহাটে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:২১, ১৮ নভেম্বর ২০২১

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে প্রতিবছরের মতো এবারও বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। ক্যালেন্ডার নয়, পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার এ জেলায় প্রতিবছর মতো বসেছে মাছের মেলা। 

বাঙালি সংস্কৃতির নবান্নের মেলায় ঢল নামে সব বয়সী মানুষের। প্রতিবছর মাছ মেলার আয়োজনে আনন্দের ঘণ্টা বাজে আশেপাশের ১৫-২০ গ্রামের মানুষের। মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের অপেক্ষা এ দিনটিকে ঘিরে।

জয়পুরহাটের প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব। কৃষকদের ঘরে উঠেছে নতুন ধান। পিঠা-পায়েসসহ নানা আয়োজনে জামাই ও স্বজনদের নিয়ে উদযাপিত হচ্ছে এ উৎসব। 

এই দিনের অপেক্ষায় প্রহর গুণেন এ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের লোকজন। এই দিনকে ঘিরে পাঁচশিরাতে ভোর ৪টা থেকে সারাদিন চলে মাছ কেনা-বেচার উৎসব। এই উৎসবে আসেন এ এলাকার জামাই-মেয়ে, বিয়াই-বিয়ানসহ আত্মীয়-স্বজনরা।

মূলত প্রতিযোগিতা করেই মেলা থেকে জামাইরা মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যান।

সীমান্ত ঘেঁষা জেলায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই মেলা জুড়ে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতা আর কৌতুহলী মানুষের ঢল। সকাল থেকেই ক্রেতারা ভিড় জমান মাছের মেলায়। মেলার প্রতিটি দোকানে সাজানো হয়েছিল দেশীয় জাতের বোয়াল, রুই, মৃগেল, কাতল, চিতল, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, বাঘাআইড়সহ নানা ধরনের মাছ। 

মেলায় সর্বোচ্চ ২৫ কেজি ওজনের কাতল মাছ বিক্রি হয়েছে ৩৭ হাজার টাকায়। 

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দিনটি উদযাপন উপলক্ষে মাছ ব্যবসায়ীরা কয়েকদিন আগে থেকেই পাঁচশিরা বাজারে তাদের আড়ৎ ঘরে এলাকা থেকে নানা জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করেন। মেলা উপলক্ষে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি, পেশাজীবী মানুষরা উচ্চ মূল্যে এসব মাছ কেনেন। 

আগের তুলনায় এ বছর মেলায় লোকজনের উপস্থিতি ছিল বেশি। মাছ কেনাবেচাও হয়েছে প্রচুর।

মেলায় মাছ বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, মেলাতে কাতলা, রুই, মৃগেল ৭শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা কেজিতে এবং বাঘাআইড়, বোয়াল ও চিতল মাছ ১৩শ’ থেকে ২ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি আকারের মাছ ৩৯০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার ক্রেতা ছিল বেশি। তাই মাছও বিক্রি হয়েছে বেশি।

মেলায় মাছ কিনতে এসেছেন পৌরসভার মূলগ্রামের জামাই আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই মেলা উপলক্ষে শ্বশুরবাড়ি প্রতিবছরই আসি। যেহেতু এই মেলা জামাই-মেয়ে উপলক্ষে আয়োজন করা হয়, সে কারণে মাছ কিনতেই হয়। এবারও ৯ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ কিনেছি। অন্য বছরের চেয়ে এবার মাছের দাম একটু বেশি। তারপরও আনন্দ লাগছে।
 
পাঁচশিরা বাজার ইজারাদার ছানোয়ার হোসেন ছানো বলেন, এ মেলার কোনো আয়োজক নেই। প্রতিবছর এই দিনে মাছের মেলা বসে। তবে মাছ ব্যবসায়ীরা মেলার আগে এক সপ্তাহ ধরে এলাকায় মাইকে প্রচার করেন। এই দিনে মেলায় প্রচুর মাছ আমদানি এবং বিক্রি হয়।

কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আজকের মেলায় কমপক্ষে ১ থেকে সোয়া কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হবে। মৎস্য বিভাগ চাষীদের সবসময় মাছ চাষে পরামর্শ দিয়ে আসা হচ্ছে। আগামীতে এই মেলার পরিধি আরও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
 
কালাই পৌর মেয়র রাবেয়া সুলতানা বলেন, নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই কালাই পাঁচশিরা বাজারে মাছের মেলা বসে। মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে এখানে উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়। পৌরসভার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।

কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিনফুজুর রহমান মিলন জানান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হওয়ায় নবান্নের এই মেলায় কেনাকাটা করতে আসেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি