পরকিয়ার জেরে হত্যা, নারীসহ দুজনের ফাঁসির আদেশ
প্রকাশিত : ১৫:০৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামে পরকিয়ার জেরে কৃষক নুরুন্নবী হত্যায় নারীসহ দুইজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে প্রত্যেককে। মামলায় অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় নারী আসামির স্বামীকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুরে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইবুন্যাল ও বিশেষ দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক আকবর আলী শেখ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- দুর্গাপুর উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের মফিজ উদ্দিন ও দেরাজ উদ্দিনের স্ত্রী ফুলজান বিবি।
অপরাধ দমন ট্রাইবুন্যালের পিপি আসাদুজ্জামান মিঠু জানান, এ মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এর মধ্যে আসামি মফিজ উদ্দিন ও ফুলজান বিবির ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। মামলার অপর আসামি ফুলজানের স্বামী দেরাজ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় তাকে খালাস দেয়া হয়।
এই মামলায় ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে আদালত।
আইনজীবী আসাদুজ্জামান মিঠু বলেন, দেরাজ মিস্ত্রির স্ত্রী ফুলজানের সাথে পরকিয়া ছিল মফিজ উদ্দিনের। একদিন সেই বাড়িতে নূরনবীকে দেখতে পান মফিজ উদ্দিন। এসময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নুরুন্নবীকে হত্যার হুমকি দেন মফিজ।
এই সূত্র ধরে পরিকল্পনা করে ফুলজান বিবি ও মফিজ উদ্দিন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল নুরুন্নবীকে বাড়িতে ডাকেন ফুলজান। আর আগে থেকেই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন মফিজ উদ্দিন। এরপরে নুরুন্নবী ও মফিজের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
এক পর্যায়ে ফুলজান বিবি একটি ধারালো হাসুয়া মফিজের হাতে তুলে দিয়ে হত্যা করতে বলে। নুরুন্নবীর গলায় আঘাত করে মস্তক আলাদা করে দেয় মফিজ। এরপর তারা নিহত নুরুন্নবীর মস্তকহীন লাশ একটি বস্তায় ভরে বিলে ফেলে আসেন। আর মস্ককটি আরও দূরে ফেলে দিয়ে আসে তারা।
মফিজ ও ফুলজান বিবির ধারণা ছিল, মানুষ যেনো মনে করে নুরুন্নবীকে গলাকাটারা হত্যা করে মস্কক নিয়ে গেছে। তবে যে রাস্তা দিয়ে হত্যার পরে মৃত নুরুন্নবীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাতে রক্ত পড়ে ছিল। এই রক্ত ফুলজান বিবির বাড়ি থেকে লাশ ফেলে আসা জমি পর্যন্ত দেখা যায়।
একদিন পর দুর্গাপুরের কান্দর বিলে নুরুন্নবীর মস্তিষ্কবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে হাসেম আলী দুর্গাপুর থানায় বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
এই ঘটনায় স্থানীয়রা ফুলজান বিবির বাড়ি ঘেরাও করে। পরে পুলিশ ফুলজান বিবি, তার স্বামী দেরাজ মিস্ত্রি, ছেলে আব্দুর রহিম ও মফিজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।
পরবর্তিতে মামলাটি সিআইডিতে গেলে ছেলে আব্দুর রহিমের কোন সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আর ফুলজান বিবি ও মফিজ উদ্দিন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেন।
এএইচ/
আরও পড়ুন