মেহেদী হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন
প্রকাশিত : ২২:২২, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১
ঠাকুরগাঁও সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ২২ ব্যাচের মেধাবী শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের (১৬) নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও শোক র্যালি করেছে সহপার্টিরা। বৃহস্পতিবারদুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও শোক র্যালি করে।
এসময় সহপার্টি স্কুলের ছাত্ররা বন্ধু মেহেদীর জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং হত্যাকারিদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য গগণ বিদারী স্লোগান দিতে থাকে।
স্কুলের সহপার্টি ছাত্ররা বলে, আমরা সাধারণ ছাত্র, কে বা কাহারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদের দ্রুত শনাক্ত করা হোক। এভাবে যেন আর কোন মা -এর বুক খালি না হয়, কোন বন্ধুকে যেন তার বন্ধু না হারাতে হয়। আমরা এই হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্থি চাই।
মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই আনিসুর বলেন, পুলিশ এই হত্যার সুষ্ঠভাবে তদন্ত করছে। মামলা প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মামুন ভুইয়া বলেন, আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সকল প্রকার সহযোগীতা করা হবে। এই হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত হবে বলে সকল ছাত্রকে এই বিষয়ে আশ^স্থ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মেহেদী (১৬) কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও দুই শিক্ষার্থী।
নিহত মেহেদী সদর উপজেলার রুহিয়া থানার সেনিহারী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে এবং সে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
আহতরা হলো, ঠাকুরগাঁও শহরের পরিষদপাড়া এলাকার মো. জুয়েলের ছেলে আরমান এবং সে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র ও একই এলাকার মো. মিঠুর ছেলে গালিফ এবং সে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
আহত আরমানের বাবা মো. জুয়েল বলেন, বুধবার সন্ধ্যার পর আমার ছেলে আরমান, ভাগিনা গাফিল ও প্রতিবেশি মেহেদী বাসা থেকে বের হয়ে শহরের বিসিকশিল্প নগরী এলাকার শামীমের হোটেলে চা খাওয়ার জন্য যায়। চা খাওয়া শেষে বাড়িতে ফেরার পথে মোবাইল ফোনের লাইট জ¦ালিয়ে তারা বাড়িতে ফিরছিল। এসময় রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন দুর্বৃত্ত আরমান, মেহেদী ও গালিফকে বেধরক পেটায়। এক পর্যায়ে ঐ দুর্বৃত্তরা ধারালো ছোড়া দিয়ে মেহেদীকে কোপাতে থাকে, এসময় মেহেদীকে বাঁচাতে আরমান এগিয়ে গেলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এসময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আহত অবস্থায় আমার ছেলে আরমান মুঠোফোনের মাধ্যমে আমাকে জানায় তাদেরকে মারপিট ও জখম করা হয়েছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহত অবস্থায় মেহেদী, আরমান ও গালিফকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেহেদীকে মৃত ঘোষনা করেন।
জুয়েল আরো বলেন, কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে কিছুই বলতে পারছিনা। যারাই এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকুক আমি তাদের দ্রুত গ্রেফপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
মেহেদী হাসান মিরাজের মা মাহফুজা বলেন, বুধবার রাতে আমার ছেলেকে পাশের বাড়ির গালিফ ডেকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে তার নানা মিরাজকে খুঁজতে যায়। মিরাজকে পেলে সে তার নানাকে বলে তুমি যাও আমি একটু পরে যাচ্ছি। একটু পরে বিসিক শিল্পনগরী এলাকার পাশে এক রাস্তায় তাকে মেরে ফেলে রাখে। আমার ছেলে তিনবার বাঁচার চেষ্টা করেছিল তাকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে আহত অন্য দুইজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক চিৎকার দিলেও তো অন্যমানুষ এসে আমার ছেলেকে হাসপাতালে সাথে সাথে নিয়ে যেত। কিন্তু তারা চিৎকারও করেনি। এমন করে যেন আর কোন মায়ের কোল খালি না হয় তাই ছেলের হত্যাকারীদের সুষ্ঠ বিচার চান তিনি।
আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মোছা: সাবরিনা বলেন, নিহত মেহেদীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়। এছাড়াও আহত আরমানের বাম পায়ের রানে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, এতে বেশ ভালো ক্ষত হয়েছে, তাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে আহত আরেকজন গালিফ তার শরীরে ফোলা জখমের দাগ রয়েছে, তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে মামলা দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার নিহত মেহেদীর লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলে বিকেলে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এসময় সহপার্টি ও স্বজনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
আরকে//
আরও পড়ুন