ফুলের রঙে রঙিন যশোরের গদখালী
প্রকাশিত : ২৩:৪২, ৩ জানুয়ারি ২০২২
করোনার কারণে দু‘বছর ঘরে আটকে থাকা শতশত নারী-পুরুষ ফুলের ঘ্রানে নতুন বছর বরণে উৎসবে মেতেছে ফুলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত যশোরের গদখালি। বছরের প্রথম দিন থেকে এখনও নানা বয়সের মানুষ জড়ো হয়েছেন ফুলের রাজ্যে। সবাই মেতেছেন আনন্দ উল্লাসে। গদখালির বিস্তীর্র্ণ মাঠ জুড়ে নানা বর্ণের, নানা গন্ধের ফুলের ছড়াছড়ি। হেটে হেটে যতদূর যাবেন শুধুই ফুলের ছড়াছড়ি।
নতুন বছরকে বরণ করতে ও বিভিন্ন উৎসবে যে ফুলের দরকার এখান থেকে তার ৭৫ শতাংশ ফুল যায় সারা দেশে। ২০২১ সালের ক্লান্তি, গ্লানি, দুঃখ ভুলতে বন্ধু পরিবার সবাইকে নিয়ে জড়ো হয়েছেন তারা ফুলের রাজ্যে। ঘুরে বেড়াচ্ছেন ফুলের বাগানে। স্মৃতিকে ধরে রাখতে তুলছেন ছবি। করছেন ভিডিও।
এই উচ্ছ্বাস প্রাণের, এই উচ্ছ্বাস বাধ ভাঙা আনন্দের। দু’বছর করোনা মহামারির কারনে সকলেই ছিলাম ঘরবন্দি। এবারও ওমিক্রনের মহামারির ভয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ছিল সংশয়। কিন্তু নতুন বছরে পদার্পণের পরপর কেটে যায় এই সংশয় এবং হাজারো মানুষে মুখরিত ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালি। দেশের দূরদূরান্ত থেকে আসা সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ উপভোগ করছে। মাঠের পর মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
যশোর সদরের আফছানা আফরিন পাঁপড়ি বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিনটা বাড়িতেই কাটিয়েছি। আজ দেশের ফুলের রাজধানীতে এসে উপভোগ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।
সাতক্ষীরার কলারোয়ার দিপক কুমার শেঠ বলেন, দু’বছর ঘরবন্দী ছিলাম। নির্ভয়ে বাইরে বেড়াতে যেতে পারিনি। এবার অন্তত ফুলের রাজ্যে আসতে পেরে আমি গর্বিত। বাংলাদেশের মানুষ যাতে নতুন বছরে সুন্দরভাবে চলতে পারে এ আশা করছি।
নাভারণের কামরুজ্জামান মিন্টু বলেন, ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালি এসে নতুন বছরের তৃতীয় দিনটি পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতে পারছি খুবই ভালো লাগছে। খুব বেশি আনন্দ করছি।
বেনাপোল থেকে সপরিবারে এসেছেন মশিউর রহমান ও পারভীন আক্তার দম্পতি। মশিউর বলেন, খুবই আনন্দ লাগছে এবং বেশ উপভোগ করছি এই দিনটি। বাড়ির পাশে হলেও দেখা হয়নি কোন দিন। তাই স্বপরিবারে আসলাম ঘুরতে। নিজের প্রিয় মানুষকে একতোড়া লাল গোলাপ দিয়ে কতটা তাঁকে ভালোবাসি তা বুঝানোর চেষ্টা করেছি।
নাভারন ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজের ফারজানা আক্তার রিমি, তৃষা দেবনাথ, উম্মে আয়মান, সানজিদা খাতুন, সুমাইয়া তাবাসসুম ও লামিয়া উসমান এলিন এইচএসসি পরীক্ষা শেষে বেড়াতে এসেছেন ফুলের রাজ্যে।
ফারজানা আক্তার রিমি বলেন, পরীক্ষা শেষ তাই কয় বান্ধবী মিলে ফুলের রাজধানী গদখালি এসেছি একটু আনন্দ উপভোগ করতে। বান্ধবীদের উপহার দেওয়ার জন্য ফুল কিনেছি। ফুলের বাগানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছি। সবাই মিলে বেশ আনন্দ করছি, যা বলার মতো নয়।
তরুণ উদ্যোক্তা আল আমিন বলেন, আমি গদখালি বাজারে ও অনলাইনে ফুল বিক্রি করি। গত তিন দিনের বেচাবিক্রি খুব ভাল। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে শতশত নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে গদখালিতে। তারা আসে ফুল কেনে, ফুলবাগানে যেয়ে ছবি তোলে। এই সব দিনগুলোতে একটা উৎসবের আমেজ তৈরি হয় এই এলাকায়।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, এবার ইংরেজি বর্ষবরনে তিনদিনে দেড় কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৬২৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ফুল চাষের সঙ্গে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কৃষক এবং প্রায় এক লাখ শ্রমিক সম্পৃক্ত রয়েছেন।
কেআই//
আরও পড়ুন