পেটের মধ্যে ২০ বছর ধরে কাঁচি নিয়ে ঘুরছেন এক নারী
প্রকাশিত : ২২:৫১, ৫ জানুয়ারি ২০২২
গত বিশ বছর ধরে পেটের মধ্যে আর্টারি ফরসেপ বয়ে বেড়াচ্ছেন মেহেরপুরের গাংণী উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার এক নারী। ২০০১ সালে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে পিত্তথলীর অপারেশনের পর থেকে তিনি এটি বহন করছেন।
কিন্তু বিশেষ এ কাঁচিটি কিভাবে তার পেটে থেকে গেলো সেটি তিনিও যেমন জানেন না তেমনি বলতে পারেননি তার অপারেশনের সাথে জড়িত থাকা চিকিৎসকরাও।
তবে এখন আবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় সম্প্রতি এক্সরে তে এটি ধরা পড়লেও উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস থাকায় তার শরীর থেকে এখনো এটি অপসারণ করা যায়নি। প্রায় ৫০ বছর বয়সী এ নারীর বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নওদা হাপানিয়া গ্রামে যা মেহেরপুরের গাংণীর নিকটবর্তী।
সেখানকার কুষ্টিয়া রোডে রাজা ক্লিনিকে যে চিকিৎসকরা ওই নারীর পিত্তথলির অপারেশন করেছিলেন তাদের একজন ছিলেন ক্লিনিকটির মালিক ডাঃ পারভিয়াস হোসেন রাজা।
তিনি বলছেন, "এক্সরে তে দেখা যাচ্ছে যে আর্টারি ফরসেপটি তার শরীরে আছে। তার অপারেশনের সময় আমি সহকারী হিসেবে ছিলাম। কিন্তু কীভাবে এটি থেকে গেলো মনে করতে পারছি না। এখন যেহেতু ধরা পড়েছে আমরা অন্য ক্লিনিকে সেটি অপসারণের ব্যবস্থা করবো। তবে তার ডায়াবেটিস বেশি হওয়াতে অপারেশন করা যাচ্ছে না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এলে আমরা এটি করবো"।
তবে রাজা ক্লিনিকের সাথে মৌখিক সমঝোতার কারণে বিষয়টি নিয়ে তারা আর গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছেন ওই নারীর পরিবারের একজন সদস্য। মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলছেন ঘটনাটি তদন্তে আজই তারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
আর্টারি ফরসেপ কী?
আর্টারি ফরসেপ এক ধরণের কাঁচি অপারেশন বা ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার সময় ব্যবহৃত একটি উপকরণ। সাধারণত অপারেশন করার সময় গজ, কটন ইত্যাদি সরাসরি হাত দিয়ে না ধরে আর্টারি ফরসেপ ব্যবহার করেন চিকিৎসকরা।
এছাড়া কোনো লম্বা সুচ, কাঁটা ইত্যাদি শরীরের কোনো স্থানে ঢুকে গেলে তা বের করার কাজেও এটি ব্যবহার করা হয়। তবে এর অগ্রভাগ কাঁচির মতো সুচালো বা ধারালো নয়।
ডাঃ পারভিয়াস হোসেন রাজা বলছেন এটি কোন প্রাণসংহারি কিছু নয়। তেমনটি হলে এতদিন উনি সহ্য করতে পারতেন না।
তিনি বলেন, যদিও সার্জারি আমি না করলেও সার্জারি টিমের সদস্য হিসেবে ভুল যে হয়েছে সেটি স্বীকার করতে কোন দ্বিধা করছি না। ওনার জন্য যা করার সেটি আমরা করবো। এক্সরে তে দেখা যাচ্ছে আর্টারি ফরসেপটি লিভারের নীচে শরীরের ওয়ালের সাথে সেটে আছে।
এতে এ ঘটনায় রীতিমত বিস্মিত মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, আমি রীতিমত অবাক। এতদিন এটা সহ্য করলেন কি করে তিনি। আর ধরাই বা পড়লোনা কেন। তবে আল্লাহর ইচ্ছা। আমরা তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তদন্ত হলে জানা যাবে।
স্থানীয় একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জানিয়েছেন শরীরে নানা ধরণের জ্বালা যন্ত্রণার জন্য ওই নারীর অসুবিধার কথা এলাকার সবাই জানেন। যে ক্লিনিকে এই ঘটনা ঘটেছে সেটার মালিকও তাদের আত্মীয়।
সে কারণে এলাকাবাসী সবাই মিলে আলোচনা করে এর একটি সমাধান খুঁজে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
"তবে উনাকে সবসময় দেখি ব্যথায় যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু কিসের ব্যথা সেটি কেউ কখনো বুঝতে পারেনি। হয়তো ভালো ডাক্তারের কাছে এতদিন যায়নি বলে এটি ধরা পড়েনি এতদিন," বলছিলেন তিনি।
ওই নারীর পুত্রবধূ অবশ্য বলেছেন যে অনেক দিন ধরেই হোমিও কবিরাজিসহ নানা চেষ্টা করেছেন কিন্তু তার শাশুড়ি সুস্থ হচ্ছিলেন না। এখন চুয়াডাঙ্গায় গিয়ে ডাক্তার দেখানোর পর তারা জানালো এই ঘটনা। তিনি এবং তাদের আশা এবার তার শাশুড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
যদিও ডা: পারভিয়াস হোসেন রাজা বলছেন ওই নারীর ডায়াবেটিস এতো বেশি যে সেটি নিয়ন্ত্রণে আনতেই কষ্ট হচ্ছে আর ডায়াবেটিসের প্রভাবে শরীরে আরও অনেক সমস্যাও এতদিনে তৈরি হয়েছে। তবে ওই নারীর সব ধরণের চিকিৎসাতেই তারা সহযোগিতা করবেন বলেও ইতোমধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এসি
আরও পড়ুন