ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ওমিক্রনের কড়াকড়িতে বেনাপোলে কমেছে যাত্রী যাতায়াত

জামাল হোসেন, বেনাপোল থেকে: 

প্রকাশিত : ১৭:১৭, ৬ জানুয়ারি ২০২২

ভারতে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে নানান কঠোরতায় আবারও কমেছে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত। ভারত যেতে সড়ক পথে ভিসার আবেদন করলেও মিলছে আকাশ পথের ভিসা। একদিকে আকাশ পথে বিমান ভাড়া ৩ গুণেরও বেশি আবার এক সপ্তাহের আগে মিলছে না টিকিট। সেই সাথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। সেই সাথে ডবল ডোজ টিকা নেওয়ার পরও একবার ভারতে যেতে দুই বার করোনা পরীক্ষা করাতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে এলেও চেকপোস্টে নানা ভাবে অর্থ আদায়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পাসপোর্টযাত্রীদের। 

এতে জরুরি প্রয়োজনে সময় মতো যাতায়াত করতে না পেরে চিকিৎসা, ব্যবসা ও শিক্ষাখাত বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাসপোর্টযাত্রীরা। গত সপ্তাহে দিনে যাত্রী যাতায়াতের পরিমাণ তিন হাজারের কাছাকাছি থাকলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে হাজারের মত। চলতি সপ্তাহের প্রথম ৫দিনে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াত করেছেন ৫ হাজার ৬৮৭ জন। এর মধ্যে ভারতে গেছে ২ হাজার ২৬৭ জন ও ভারত থেকে এসেছে ৩ হাজার ৪২০ জন। ১ জানুয়ারি ভারতে গেছে ৩৭৫ জন এসেছেন ৭০৯ জন, ২ জানুয়ারি ভারতে গেছে ৪৭৮ জন এসেছেন ৮৬৪ জন, ৩ জানুয়ারি ভারতে গেছে ৪৯১ জন এসেছেন ৬১১ জন, ৪ জানুয়ারি ভারতে গেছে ৪৪২ জন এসেছেন ৬৩৯ জন ও ৫ জানুয়ারি ভারতে গেছে ৪৮১ জন এসেছেন ৫৯৭ জন।

জানা গেছে, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা আর ভ্রমণে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় ১৮ লাখ পাসপোর্টযাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করত। ভারতে করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত। এতে জরুরি প্রয়োজনে ভারতে যেতে না পেরে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যাত্রীরা। গত দুই বছরেও পিছু ছাড়েনি করোনা। এক এক সময়ে এক একটি নতুন রূপে সংক্রমণ ছড়িয়ে চলেছে।

সবশেষ নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়েছে বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে। ইতিমধ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১০ জন আক্রান্ত হলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। ওমিক্রনে মারা গেছে একজন। ভারতের অনেক রাজ্যে বন্ধ করা হয়েছে স্কুল কলেজ। চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রয়োজনে বর্তমান পরিস্থিতি মধ্যে বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াত চালু রয়েছে। এ অবস্থায় ভারতে সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলায় যাত্রী যাতায়াত নিরুৎসাহিত করতে দেখা গেছে ভারতীয় দূতাবাসকে। এতে সাধারণ মানুষের ব্যবসা, চিকিৎসা বা শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভারত যাত্রা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ার কারণে সরকার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত, বিশেষ করে বেনাপোল স্থলবন্দর বন্ধের কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যে হারে ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে বেনাপোল স্থলবন্দর বন্ধ করতে হয় কি না, তা নিয়ে ভাবছি। আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। পশ্চিমবঙ্গে ওমিক্রনের সংক্রমণ বা বিস্তারে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’ অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন মোকাবিলায় বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণায় গত সোমবার সকাল থেকে বাংলাদেশের বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। 

জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। ভারত ফেরত ১২ বছরের বেশি বয়সী যাত্রীদের র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। মেডিক্যাল ও বিজনেস ভিসা (আমদানি রপ্তানি ডকুমেন্ট) ছাড়া কাউকে ভারতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না সে দেশের ইমিগ্রেশন। ভরত থেকে আসা সকল যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৪ জনের শরীরে করোনার উপসর্গ পাওয়া গেছে। তাদের যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চ মহলের প্রতিনিধিরাও বেনাপোল চেকপোস্ট পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য কর্মীদের ভারত ফেরত পাসপোসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন।

চিকিৎসাসেবী পাসপোর্টধারী যাত্রী আরতী দেবনাথ জানান, সড়ক পথের আবেদন করলেও মিলছে আকাশ পথের ভিসা। তিনগুণ বেড়েছে বিমান ভাড়া। এক সপ্তাহের আগে মিলছে না কোনো টিকিট। এত টাকা খরচ করে সাধারণ যাত্রীদের ভারতে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় উত্তরণে দেশে চিকিৎসা খাত আরও উন্নত করা দরকার।

ব্যবসায়ী শামিম বলেন, ব্যবসায়ীক কাজে মাঝে মধ্যে ভারত যেতে হয়। এখন ভারতীয় ইমিগ্রেশনের কড়াকড়িতে ইচ্ছে মত যাওয়া যাচ্ছে না। এতে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার শুভঙ্কর কুমার মন্ডল বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে ভারত ফেরত সন্দেহভাজন যাত্রীদের করোনার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত ১৫ দিনে ভারত ফেরত সন্দেহভাজন ৬৪ জন বাংলাদেশিকে পরীক্ষা করে ৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের রাখা হয়েছে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা রেড জোনে।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্থলপথে যাত্রী সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত ৫দিনে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াত করেছেন ৫ হাজার ৬৮৭ জন, এর মধ্যে ভারতে গেছে ২ হাজার ২৬৭ জন ও ভারত থেকে এসেছে ৩ হাজার ৪২০ জন। ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার করেছে বেনাপোল চেকপোস্টসহ বন্দর এলাকায়।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি