ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

স্ত্রীর পর শিশুকন্যাকেও মেরে ঝুলিয়ে রাখেন আব্দুস সাত্তার

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৮:০০, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

ঘাতক আব্দুস সাত্তার (বাঁয়ে) এবং নিহতের স্বজনের আহাজারী (ডানে)

ঘাতক আব্দুস সাত্তার (বাঁয়ে) এবং নিহতের স্বজনের আহাজারী (ডানে)

পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী মাসুরা বেগম (২০) ও তিন বছরের শিশুকন্যা মাহমুদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখেন আব্দুস সাত্তার। খবরপেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। 

শনিবার রাতে নাটোর শহরের চৌকিরপাড় এলাকার এ ঘটনায় রোববার দুপুরে আব্দুস সাত্তারকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত আব্দুস সাত্তার একই এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে। সে একজন পুরাতন কাপড়ের ব্যবসায়ী।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, প্রায় ৫/৬ বছর আগে সদর উপজেলার গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের মাসুরা খাতুনের সাথে শহরের উত্তর চৌকিরপাড় মহল্লার আব্দুস সাত্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। পেশায় একজন পুরাতন কাপড়ের ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী মাসুরা বেগমের দীর্ঘদিন ধরেই পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। 

জানা যায়, ঝগড়ার জেরে শনিবার রাতের কোনও এক সময় আব্দুস সাত্তার তাঁর স্ত্রী মাসুরা বেগম ও শিশুকন্যা মাহমুদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন। সকালে ঘরে তালা ঝুলিয়ে তিনি বাড়ির বাহিরে চলে যায়। দুপুরে বাড়ি ফিরে আসার পর ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। এসময় প্রতিবেশী ও স্বজনদের সন্দেহ হলে তারা আব্দুস সাত্তার ও তার স্ত্রীর নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করেন। কিন্তু ঘরের দরজা না খুলে আব্দুস সাত্তার চিৎকার করে বলতে থাকেন, তিনি তার ফুটফুটে সুন্দর স্ত্রী ও কন্যাকে হত্যা করেছেন। 

এই কথা শোনার পর প্রতিবেশীসহ স্বজনরা দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে মা ও মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এসময় তারা মৃতদেহ দুটি নামিয়ে চৌকির ওপর শুইয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক আব্দুস সাত্তারকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। পরে মা ও শিশুকন্যার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক জুবায়েরসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

এদিকে মেয়ে ও নাতনী হত্যার খবর পেয়ে নানা মেছের আলী ও নানী আছিয়া বেগম গোয়ালডাঙ্গা গ্রাম থেকে মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে ছুটে আসেন। এসময় তারা বিলাপ করতে থাকেন, আর তাদের মেয়ে হত্যাকারীর ফাঁসি দাবী করেন।

আছিয়া বেগম জানান, বিয়ে দেয়ার পর থেকে তার মেয়েকে নির্যাতন করতে থাকে জামাতা, শাশুড়ি ও ননদসহ জামাতার পরিবারের সদস্যরা। জামাতা আব্দুস সাত্তার মাঝে মধ্যেই যৌতুকের টাকা দাবী করতো। এমনকি প্রতিবেশীদের সাথে তার মেয়েকে কথা বলতেও দিত না। 

তিনি এসময় তার মেয়ে ও নাতনীর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবী জানান। 

এলাকাবসী জানান, এলাকায় দীর্ঘ কয়েক বছর সংসার জীবন কাটালেও প্রতিবেশীদের কেউ মাসুরা নামটা জানতে পারেননি। আব্দুস সাত্তার তার বউকে কারও সাথে কথা বলতে বা মিশতে দিতেন না। সবাই জানতেন সাত্তারের বউ খুব পর্দানশীল।

এদিকে, ঘাতক আব্দুস সাত্তার এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে চিৎকার করে বলেন, তিনি নিজে তাঁর স্ত্রী ও কন্যা সন্তানকে হত্যা করেছেন। শনিবার রাতে তাদের মেরে ফেলেছেন। স্ত্রীকে হত্যার পর তার কন্যা খুব কান্নাকাটি করছিল। তখন কান্না থামানোর জন্য শিশু কন্যা মাহমুদাকে আছড়িয়ে গলা টিপে মেরে ঝুলিয়ে রাখেন ঘরের তীরের সাথে।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনছুর রহমান জানান, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রী মাসুরা বেগমের সাথে স্বামী আব্দুস সাত্তারের পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মাঝে মাঝেই ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। শনিবার রাতে খাওয়া শেষে আব্দুস সাত্তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঘুমাতে যায়। রাতের কোনও এক সময় আব্দুস সাত্তার তার স্ত্রী মাসুরা বেগম ও কন্যা সন্তান মাহমুদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। এ সময় আব্দুস সাত্তারের ছেলেকেও মারধর করে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে সে। পরে দুপুরে মরদেহ দুটি গুম করার চেষ্টায় বস্তাবন্দী করার সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। 

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে মা ও মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ব্যাপারে পরিবারের অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।  

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি