ঢাকা, রবিবার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লোকসানের মুখে ঠাকুরগাঁওয়ের আগাম আলুচাষীরা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০০:০৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ০০:১০, ২৬ জানুয়ারি ২০২২

এ বছর আগাম জাতের আলু চাষ করেও বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন জেলার চাষীরা। মৌসুমের শুরুতে কিছুটা দাম মিললেও ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে দাম কমে যায়। এতে আলু চাষ করে বড় ধরণের লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষীদের। বর্তমানে বাজারে পুরনো আলুর সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় নতুন আলুতে চাহিদা কম দেখাচ্ছেন ক্রেতারা। আর এ কারণেই ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি এলাকার চাষীদের।

গত বছর তারা প্রতি কেজি আলু মাঠে বিক্রি করেছিলেন ২৫-২৮ টাকা দরে। এবারে তা এক ধাক্কায় নেমে এসেছে ৫-৬ টাকায়। ফলে উৎপাদন খরচের সঙ্গে আলুর দামের তফাৎ মিলাতে লোকসানের অংক গুনতে হচ্ছে জেলার আলু চাষীদের। তবে এখনও সময় আছে কৃষক আলুতে লাভবান হতে পারে-আশাবাদ স্থানীয় কৃষি অফিসের। 

ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও আবহাওয়া সবজি আবাদের উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছর ক্রমান্বয়ে আলু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জেলার চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য জেলা এমনকি বিদেশেও সরবরাহ করা হয়। এ কারণে আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঠাকুরগাও। তাই আমনের জমি পতিত রেখে সবজি চাষীগণ বর্ষার পরপরই জমিতে আগাম আলু রোপন শুরু করেন। কিন্তু এবার রোপনের কিছু দিনের মাথায় হঠাৎ অতিবৃষ্টিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে আলু ক্ষেত। এ কারণে অনেক কৃষকের আলু বীজ রোপনকৃত জমিতে পচে নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে বেশি দামে আলু বীজ কিনে এ জেলার চাষীরা দ্বিতীয় বার আগাম আলু রোপন করেন। এতে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি পড়ে।

ঠাকুরগাঁয়ের মাটি আলু চাষের জন্য বেশি উপযোগী তাই আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ঠাকুরগাও। প্রতিবছর ক্রমান্বয়ে আলু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা চাহিদা পূরণ করে কোন জেলাতে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু আগাম আলু চাষে এবার মাথায় হাত পড়ল কৃষকের। বর্তমানে মাঠে সাদা জাতের গ্যানোলা আলু ৩-৫ টাকা কেজি দরে এবং এস্টারিক্স জাতের লাল আলু ৬-৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেনা কৃষকরা।

বর্তমানে জেলার বালিয়াডাঙ্গী, রাণীশংকৈল ও সদর উপজেলার বেশ কিছু এলাকার চাষীরা আগাম রোপনকৃত আলু উত্তোলন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু বাজারে এখনো পুরাতন আলু থাকায় এ আলুর চাহিদা তেমন একটা নেই। এ কারণে চাহিদা না থাকায় আলুর বাজারে ধ্বস নেমেছে। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি আলু ৫/৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লোকসানের মুখে পড়েছেন আলু চাষীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবারে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ২৬ হাজার ৭শ’ ৯ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ১৪ হেক্টর জমির আলু কর্তন করা হয়েছে। আর গত বছর জেলাতে ২৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৭ লাখ ৪১ হাজার ২৯৭ মে.টন।  

আলু চাষীরা জানান, একবিঘা জমিতে আগাম আলু উৎপাদন করতে বিঘা প্রতি ব্যয় হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু ৫/৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করে বিঘা প্রতি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৫/১৬ হাজার টাকা। এতে বিঘা প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা। কয়েকজন চাষী জানান, গতবছর প্রতি কেজি আলু মাঠে বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকা আর এ বছর  প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে  ৫/৭ টাকা কেজি।

জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: আবু হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পুরাতন আলুর মজুদ শেষ হলে কৃষকরা আলুর ন্যায্যমূল্য পাবে। সেই সাথে এবারে আলুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। চাষ করা আলু এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে। চাষিদের যে কোনো পরামর্শের জন্য কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে রয়েছে।

তবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষক যে ফসল উৎপাদন করে-তার ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটাই প্রত্যাশা চাষীদের। 
কেআই//           
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি