নদীর ঢেউ কাজে লাগিয়ে যুবকের বিদ্যুৎ উৎপাদন
প্রকাশিত : ১২:৫৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১২:৫৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

নদীর ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মোংলার শেলা বুনিয়া গ্রামের ওমর ফারুক। দীর্ঘ দুবছর গবেষণা করে পরীক্ষামূলক একটা প্রোটোটাইপ ওয়েভ প্রজেক্ট দাঁড় করিয়েছেন তিনি। যার নাম দিয়েছেন তিনি ‘বঙ্গোপ ওয়েভ ফ্রেস এনার্জি’। ইতোমধ্যেই তার এ ওয়েব পাওয়ার প্লান্টটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।
ওমর ফারুক দাবি করেন, বড় পরিসরে যদি এই প্রকল্পটি বাস্তাবায়ন করা যায়। তাহলে কোন ধরনের জ্বালানি খরচ ছাড়াই সল্পখরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরবারহ করা সম্ভব হবে।
শেলাবুনিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক সালাম শেখ বলেন, ওমর ফারুক খুবই মেধাবি ছেলে। তার বাবা ইউনুস আলী মারা যাওয়ার পর ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারেনি সে। তবে ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করেছি তার বিদ্যুৎ নিয়ে আগ্রহের বিষয়টি। দীর্ঘদিন চেষ্টার ফলে সে যে যন্ত্রটি তৈরি করেছে তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। ওমর ফারুককে স্বীকৃতি দিয়ে তার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ওমর ফারুক বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বিদ্যুৎ বিষয়ে আগ্রহ ছিলো। এই আগ্রহ থেকেই ভর্তি হয়েছিলাম ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করার জন্য। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তবে মনের ভেতর সপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষা বরাবরই ছিলো।’
‘দেশের বিভিন্ন সমুদ্রের ঢেউয়ের বিদ্যুৎ তৈরির ওয়েব পাওয়ার প্লান্ট দেখে প্রায় দুই বছর চেষ্টা করে পরীক্ষার জন্য এই প্রোটোটাইপ ওয়েব পাওয়ার প্লান্টটি তৈরি করেছি। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা’ জানান ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যে কয়টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে তা অনেক ব্যয়বহুল। কারণ এগুলো পরিচালনা করতে জ্বালানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বছরের পর বছর কোন ধরনের জ্বালানি ব্যয় ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।’
ওমর ফারুক আরও বলেন, ‘আমার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকার যদি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তাহলে সাধারণ মানুষ অনেক কম খরচে বিদ্যুৎ পাবে। এছাড়া এই ওয়েব পাওয়ার প্লান্টে কোন কার্বণ তৈরি হয়না তাই প্রকৃতির কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা নেই। সি লাইফের উপর লক্ষ্য রেখে ডিজাইন করার ফলে সামুদ্রিক কোন প্রাণীর উপর এর কোন প্রভাব পড়বে না।’
বাগেরহাট ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ (ওজোপাডিকো) সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, ওমর ফারুক সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন এটাকে বলা হয় ‘টাইডাল পাওয়ার’ প্রযুক্তি। এটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আমাদেরে দেশেও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব, জানান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান।
উল্লেখ্য, ওমর ফারুক বৈদ্যুতিক পাওয়ার প্লান্টে চাকরির পাশাপাশি অনলাইনে পাওয়ার প্ল্যান কোর্সে অধ্যায়নরত।
এএইচ/
আরও পড়ুন