ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ঠাকুরগাঁওয়ে ছেলে থেকে মেয়ে হওয়ায় গ্রামে চাঞ্চল্য সৃষ্টি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২০:৩৬, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে এক ছেলে নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করে মেয়ে হয়েছেন। এ নিয়ে উপজেলার থুমনিয়া গ্রামে চলছে তমুল তোলপাড়। দলে দলে উৎসুক লোকজন আসছে সেই বাড়িতে এবং ঘটনাটি এলাকার মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।  

১৯৯৯ সালে ২৭ জানুয়ারি পীরগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের থুমনিয়া গ্রামে ছেলে হয়ে জন্ম নেয় সুবল শীল। সেখানকার পরিবেশে বড় হয়ে উঠে সে। কিশোর বয়সে সুবলের আচরণ ছিল মেয়েদের মতো। লাল আলতা, শাড়ি, চুড়ি পড়তে তার ভালো লাগতো বলে জানায়। এ জন্য পাড়ার বন্ধুরা তাকে হিজরা বলেও হাসাহাসি করতো। 

সুবলের মনে প্রশ্ন জাগতো সে পুরুষ নাকি মেয়ে। এ নিয়ে দু:শ্চিন্তার শেষ ছিলোনা তার। এর পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চিকিৎসার মাধ্যমে নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করে সুবল শীল থেকে হয়েছে মেধা শর্মা। এতে তাকে দেখতে তাদের বাড়িতে ভীড় জমাচ্ছেন অনেকে।

মেধা শর্মা দিনাজপুর কাহারোলে অবস্থিত জয়নন্দ এসসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি ও ২০১৮ সালে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করে এবং বর্তমানে সে ঢাকা কবি নজরুল ইসলাম সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষে অধ্যায়নরত। পড়াশোনার পাশাপাশি সে ঢাকার এক প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করছে।

মেধা শর্মা জানায়, ২০২১ সালে ভারতের কোলকাতার এক হাসপাতাল থেকে লীঙ্গ পরিবর্তনের চিকিৎসা শুরু করে এবং এখনো তার চিকিৎসা চলছে।

পুরুষ থেকে রুপান্তরিত নারী হওয়া মেঘা শর্মার মা আলো রানী ও বাবা জগেশ শীল জানান, সুবল যখন ছোট ছিল তখন থেকে তার আচরণ ছিল মেয়েদের মতো। মেয়েদের মতো সাজগোজ করতো সে। আমরা অনেক চিন্তিত ছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও তার মেয়েদের মত আচরণ আমরা পাল্টাতে পারিনি। এমন স্বভাব পাল্টাতে অনেক গালমন্দও করতাম। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। অবশেষে আমার ছেলে এখন মেয়ে লীঙ্গে রুপান্তরিত হয়েছে।

রুপান্তরিত নারী হওয়ার সিদ্ধান্তে প্রথমে রাজি হননি বাবা মা। পরবর্তীতে সন্তানের সুখের কথা ভেবে সন্তানের ইচ্ছাকেই মেনে নিয়েছেন তাঁরা। এখন পরিবারের সবার সাথেই মিলেমিশে রয়েছেন তারা। মেধার পরিবারে বাবা-মা, দাদি সহ রয়েছে আরও একভাই ও এক বোন। তারাও মেধাকে সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছে মেধা।

মেঘা শর্মা জানায়, লিঙ্গ পরিবর্তন চিকিৎসাকালীন পরিবার ব্যতিত সবার কাছে বিষয়টি গোপন রেখেছিলো সে। হঠাৎ গত ৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাড়িতে এলে বিষয়টি পাড়ায় জানাজানি হলে সবাই তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় জমায়। অনেকেই খারাপ মন্তব্যও করেন। আবার অনেকে সাপোর্টও করে অনুপ্রেরণা জোগায়।

সে আরও জানায়, সবকিছুর উর্ধ্বে আমার ইচ্ছাশক্তি আর আমার স্বপ্ন। আমার পরিবার আমাকে মেনে নিয়েছে। আমি আমার পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করছে আমি এখন সমাজের বোঝা। কিন্তু আমি আমার কাজ দিয়ে এ ধারণা বদলাতে চাই। নিজেকে একজন এয়ার হোস্টেজ হিসেবে দেখতে চান মেধা শর্মা। পাশাপাশি করতে চায় মডেলিং। সেই সাথে রুপান্তরিত নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় তার নেতৃত্বে।

স্থানীয় তাপস রায় বলেন, ছোটবেলা থেকেই সুবলের কথা ও চলাফেরা মেয়েদের মতো ছিল। এমন স্বভাবের জন্য তাকে নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করতো। পরিবার অনেক চেষ্টা করেও তার এমন স্বভাব বদলাতে পারেনি।

এ বিষয়ে জেলা উদীচীর সভাপতি সাংস্কৃতি কর্মী সেতারা বেগম বলেন, মেধা শর্মার পরিচয় সে একজন মানুষ। তার ইচ্ছা, তার স্বপ্ন পূরণ করতে সমাজের সব মানুষের এগিয়ে আসা উচিৎ। তাকে কটাক্ষ না করে তাকে সহযেগিতা করা উচিৎ। তার সমঅধিকার নিশ্চিৎ হবে সমাজে এটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। 

সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিমাই চন্দ্র জানান, আগে সুবল শীলকে ছোট বেলায় ছেলে হিসেবে দেখেছি। এখন দেখছি সে মেয়ে লিঙ্গে রুপান্তরিত হয়ে নাম দিয়েছে মেধা শর্মা। এঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছি।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি