ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

সরাইলে নদী পারাপারে ভরসা দড়ি টানা নৌকা

সরাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২০:০৯, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের জয়ধরকান্দির থেকে নদী পারাপারে তাদের একমাত্র ভরসা একটি দড়ি টানা নৌকা। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, বহু বছর ধরে তারা এ ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি করছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ দাবি বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে নৌকায় চড়ে দড়ি টেনে তাদের নদী পারাপারের দুর্ভোগও শেষ হচ্ছে না।

জয়ধরকান্দি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ নদী পারাপারে মান্ধাতা আমলের ‘দড়ি ধরে নদী পারাপার' পদ্ধতিতে এলাকাবাসী পারাপার করছে। এই পদ্ধতিতে পারাপার হচ্ছে মালামালও। আর খেয়াঘাট থাকবে না, নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হবেই। নির্বাচন এলে এসব কথা বলে প্রার্থীরা। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ খবর নেয় না। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, এপারে বাজার আর কৃষকের শত শত একর জমি ওপারে জয়ধরকান্দি গ্রামে যেতে দড়ি টানা নৌকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। জয়ধরকান্দি আলীম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে এর সাথে আছে মাদ্রাসা। এর পাশে রয়েছেন জয়ধরকান্দি গ্রামে স্বাস্থ্য ক্লিনিক।

ঘাটে সিঁড়ি না থাকায় যাত্রীদের নৌকায় উঠতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। এদিক-ওদিক হলে পা পিছলে পড়তে হবে পানিতে। জয়ধরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ আবু আহম্মদ বলেন, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনেই প্রার্থীরা নির্বাচন করতে এসে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সেতু আর হয় না।

দড়ি টানে নৌকায় নদী পারাপারের সময় কয়েকজন লোক অভিযোগ করে বলেন, বাপ দাদারা সময় থেকে দেখে আইছি। এই নদী দিয়ে এমনি দড়ি টাইনা নৌকায় পার হইছে। দড়ি টানাটানি করে আমরা চলতাছি কোন বালাযে এই দুর্গতির শেষ হয়। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।

মো. সফর আলী নামের এক যুবক জানায়, জয়ধরকান্দি গ্রামের মানুষরা সারা বছরই পানিবন্দী থাকি। আমাদের গ্রামে আসা-যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। তাই নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় গ্রামের মানুষ সব সময় কষ্ট করে। নদীর উপর সেতু না থাকায় দড়ি টানা নৌকা দিয়ে তাদের নদী পার হতে হয়। এতে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সব চেয়ে বেশি কষ্ট হয় বর্ষাকালে। এসময় নদীতে নৌকাডুবি ও প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে।

বাদল মিয়া নামে এক কৃষক জানায়, এ গ্রামের সব মানুষ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ওপারে শতশত একর জমি। উপজেলা সাথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা তাদের কৃষি পন্যের ন্যায্য মূল্যে পায় না। নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ হলে গ্রামের কৃষি, যোগাযোগ ও শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে।

বৃদ্ধ চান মিয়া বলেন, যাতায়ত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে এই গ্রামে কেউ আত্মীয়তা করতে চায় না। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই গ্রামের মানুষ সব কিছুতেই পার্শ্ববর্তী অন্য গ্রামগুলোর চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে।

প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন নামের গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, জয়ধরকান্দি একটি অবহেলিত গ্রাম। স্বাধিনতার এতো বছর পেরিয়ে গেলেও এ গ্রামে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে প্রথমে নদী পার হতে হয়। তারপর ওপার মাটির রাস্তা ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় রোগী পথেই মারা যায়। এই অবস্থা থেকে জয়ধরকান্দি গ্রামের মানুষের কোন সময় মুক্তি মিলবে। বিশেষ করে শিশু-নারী ও বৃদ্ধদের। ঘাটে এসে তাদের অপেক্ষা করতে হয় পুরুষদের জন্য। এরপর রশি টেনে নৌকা নিয়ে নদী পার হতে হয়। একটি সেতুর অভাবে ওই এলাকায় অগ্নিকাণ্ড, অসুস্থ রোগীদের নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া বা কোনো প্রকার দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরাও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনা।

রোফিয়া খাতুন বলেন, 'আমাদের বিশেষ কাজে বিভিন্ন সময়ে নদীর ওপারে যেতে হয়। নৌকা ওপাশে থাকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া দড়ি টেনে নৌকা নিয়ে নদী পার হতে হয়। একটা সেতু হলে আমাদের এই কষ্ট দূর হত।' জয়ধরকান্দি আলীম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, স্কুল খোলা থাকলে আমাদের প্রতিদিন সকালে নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। নদীতে সময় মতো নৌকা না পেলে স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়। জয়ধরকান্দি গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি জানিয়েছে এ নদীর ঘাটে একটি সেতু নির্মাণ করা।

সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আরিফুল হক মৃদুল বলেন, এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের চলাচলে যাতে দুর্ভোগ না হয় সেই জন্য এ নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ করা দরকার।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি