বেনাপোলে পিকনিক ট্রাজেডি, ৯ শিক্ষার্থীকে হারানোর ৮ বছর আজ
প্রকাশিত : ২২:১৫, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
‘বুকে তীর বিদ্ধ অবস্থায় উড়ছে ৯টি কবুতর। শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। আর পাশেই রক্তের স্রোতে বইয়ের বর্ণমালা মুছে যাচ্ছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘আমার বর্ণমালা তুমি ভালো থেকো।’ বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নির্মিত হয়েছে এসব নিহত শিশু শিক্ষার্থীদের স্মরণে একটি স্মৃতি স্তম্ভ। ১৫ ফেব্রুয়ারি বেনাপোল পিকনিক ট্রাজেডির আট বছর। এদিনটিকে ঘিরে মঙ্গলবার বেনাপোলে শোক দিবস পালিত হয়েছে।
শোকাবহ দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষে দিনব্যাপি অনুষ্ঠান কর্মসুচিতে অংশ নিতে বেনাপোল পৌর মেয়র, বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগ, নিহতদের অভিভাবক, ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, নিহতদের সহপাঠি শিক্ষার্থীগন, বেনাপোলের অন্যান্য স্কুল-মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ, শিক্ষানুরাগী, সাংবাদিক, পৌর কার্যালয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দসহ বন্দর এলাকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে উপস্থিত হতে থাকেন। সকলের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওই বিশাল শোক র্যালি সকাল ১১টার দিকে স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে বেনাপোল বাজার প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় স্কুলের সম্মুখে এসে শেষ হয়। এর আগে সকালে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, বিশিস্ট শিক্ষাবিদ ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ মাস্টার, পৌর প্যানেল মেয়র শাহাবুদ্দিন মন্টু, কমিশনার মিজানুর রহমান, কবি বকুল হক, যুবলীগ নেতা সুকুমার দেবনাথ, জাকির হোসেন, ছাত্রনেতা আরিফুজ্জামান আরিফ, দ্বীন মোহাম্মাদ প্রমুখ।
স্মৃতিস্তম্ভে পুস্প অর্পন শেষে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইজ্জত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. এনামুল হক মুকুল, সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন, বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, বেনাপোল পৌরবাসীর আহবায়ক মোস্তাক হোসেন স্বপন, শার্শা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য অহিদুজ্জামান অহিদ, বন্দর শ্রমিক নেতা ভাদু, পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন রাব্বি, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদসহ নিহত শিশুদের স্বজনেরা।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেনাপোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে মেহেরপুরের মুজিবনগরে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে চৌগাছার ঝাউতলা কাঁদবিলা পুকুর পাড়ে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৭ জন শিক্ষার্থী, আহত হয় আরো ৭০ জন শিশু শিক্ষার্থী ও ৩/৪ জন শিক্ষক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ২ জন শিক্ষার্থী মারা যান। ঘটনাস্থলে নিহতরা হলো, বেনাপোল পৌরসভার ছোটআঁচড়া গ্রামের সৈয়দ আলীর দুই মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া (১০) ও তার বোন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী জেবা আক্তার (৮), ছোটআঁচড়া গ্রামের ইউনুস আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মিথিলা (১০), রফিকুল ইসলামের মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রুনা আক্তার মীম (৯), লোকমান হোসেনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শান্ত (৯), গাজিপুর গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সাব্বির হোসেন (১০) ও নামাজ গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী আঁখি (১১)। ১৩ দিন পর ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ছোটআঁচড়া গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ইকরামুল (১১) সর্বশেষ দুর্ঘটনার ৩২ দিন পর ১৯ মার্চ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় একই গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইয়ানুর রহমান (১১)।
দিন মাস পার হয়ে ফিরে এসেছে আট বছর পর ঠিক এই দিনটি। কিন্তু ফিরে আসিনি হারিয়ে যাওয়া ৯ শিশু শিক্ষার্থী। আজো কাঁন্না থামেনি হারিয়ে যাওয়া এ সব শিশুদের পরিবারের। পথ চেয়ে বসে আছে এই বুঝি ফিরে আসছে তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানেরা। ঝরে যাওয়া ফুল ফিরে পাবে না পরিবারের সদস্যরা। তাদেরকে অশ্রুতে স্মরণ করলো আট বছর পর আবারও বেনাপোলবাসি।
কেআই//
আরও পড়ুন