ঢাকা, রবিবার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শার্শায় ৮২ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:১৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৭:৩৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২

শহীদ মিনার

শহীদ মিনার

ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর ও স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও যশোরের শার্শা উপজেলার ৮২ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হয়নি কোনও শহীদ মিনার। ভাষার মাস এলেই যেন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তবে তা কেবল খাতা কলমেই সীমাবদ্ধ। 

সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করার নির্দেশ থাকলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে আবার অনেক শহীদ মিনার হয়ে পড়েছে জরাজীর্ণ। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই চলে ঘষামাজার কাজ। 

এদিকে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের পরামর্শ দিচ্ছে শিক্ষা অফিস। তবে শহীদ মিনার নির্মাণে নেই কোনো অগ্রগতি।

জানা যায়, শার্শা উপজেলায় ৩৩টি মাদ্রাসার একটিতেও নেই শহীদ মিনার। তাছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়েও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন হয় না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এসব কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিতে সমাজের নামীদামি ব্যক্তিরা শীর্ষ পদে থাকলেও দীর্ঘদিনেও শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেননি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অথচ তারা অন্য খাতে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে। ফলে নানা ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে ভাষাপ্রেমী মানুষের মধ্যে। 

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শার্শায় ২শ ৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১২৬টি প্রাথমিক ও প্রি-ক্যাডেট এবং কমিউনিটি মিলিয়ে আরো রয়েছে ৫৪টি। এদের মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ১৮টিতে। ৩৮টি হাইস্কুলের মধ্যে শহীদ মিনার নেই ১২টিতে। ১২টি কলেজের মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ৩টিতে। ৩৩টি মাদ্রাসার মধ্যে একটিতেও কোনো শহীদ মিনার নেই। 

তবে সব মিলিয়ে অর্ধ-শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে। এ সব প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়। অভিযোগ আছে, মাদ্রাসাগুলোতে দিবসটি পালন করা হয় না। কোনো কোনো মাদ্রাসায় নামমাত্র মিলাদ মাহফিল ও পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনসহ কোনো ব্যক্তির উদ্যোগে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়ায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।

উপজেলার নাভারন বুরুজবাগান ফাজিল মাদ্রাসার সুপার একিউএম ইসমাইল হোসাইন জানান, মাদ্রাসাটি ১৯৬৫ সালে নির্মিত হলেও অদ্যবধি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালন করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।

নাভারন ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার বলেন, আমাদের কলেজে শহীদ মিনার না থাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার পায়ে হেটে বুরুজবাগান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়। অথচ আমাদের কলেজের পরিচালনা পরিষদে নামী দামি ব্যক্তিরা রয়েছেন। তারা ইচ্ছা করলেই একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিতে পারেন।

নাভারন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল জানান, আমাদের কলেজের পাশেই হাইস্কুলের শহীদ মিনার থাকায় এখানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তাপরও জায়গা সংকট রয়েছে। 

বেনাপোলের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কবি বকুল হক বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এ ধরণের খবর আমাদের সকলের জন্য দুঃখজনক। অতি দ্রুত প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকার বাধ্যকতা থাকলেও শার্শার অনেক প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে চিঠি দেয়ার পরও তারা শহীদ মিনার নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালীদের সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রি ক্যাডেট এবং কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৪টি। ১৮০টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬২টিতে কোনো শহীদ মিনার নেই। যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেখানে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। 

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি