সার্জনহীন ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি
প্রকাশিত : ১৩:২২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
চিকিৎসক স্বল্পতা ও প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা। সার্জন চিকিৎসক ও গাইনি এন্ড অবস না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪১ বছরেও হয়নি কোনো অস্ত্রোপচার। যার ফলে অস্ত্রোপচার কক্ষে পড়ে থেকেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি!
প্রায় অর্ধশত বছরের পুরোনো এই হাসপাতালকে গত ৫ বছর আগে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়েনি সেবার মান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৬টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে চলছে ভান্ডারিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা। উপজেলা হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা না থাকায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়েই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ।
চিকিৎসকগণ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বদলি হয়ে একের পর একে চলে গেছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। বর্তমানে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ এ হসপাতালে ২৪ জন চিকিৎসক এর স্থলে কাগজে কলমে ছয়জন থাকলেও প্রকৃত পক্ষে আছেন চারজন। ডা. মুফতি মাহতাব মুনতাসিন এ হাসপাতালে যোগদানের ৩ দিন পরেই ২০১৯ সনের ১১ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রেষণে (ডেপুটিশনে) কর্মরত রয়েছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে ৩১ শয্যার এ হাসপাতাটি নির্মিত হয়। ২০১১ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ এবং বিগত ২০১৭ সালে ১১ ফ্রেব্রুয়ারি তৎকালীণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ১০০ শয্যায় উন্নতির ঘোষণা দিলেও নতুন ভবন নির্মাণ আর আসবাবপত্র ছাড়া বাড়েনি কোনো জনবল। এ হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী), মেডিসিন, গাইনি এন্ড অবস, আর্থাইটিস, জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), যৌন ও চর্ম, কার্ডিওলজি, নাক-কান-গলা, সহকারী ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল অফিসারসহ ১৯ জন চিকিৎসকের পদ শূণ্য রয়েছে।
এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ৭৩টি পদের মধ্যে ২৯টি পদ কয়েক বছর ধরে শূন্য রয়েছে। আয়া দুটি পদের দুটিই শূন্য, পরিচ্ছন্ন কর্মী ৫ জনের মধ্যে রয়েছে মাত্র ২ জন।
দীর্ঘদিন ধরে কনসালটেন্ট ও গাইনি এন্ড অবস না থাকায় রোগীদের ভোগান্তিসহ চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে রোগীদের অভিযোগ।
অটোরিকশা দুর্ঘটনার শিকার দক্ষিণ পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামের মাসুদ হাওলাদার বলেন, এ হাসপাতালে সার্জারীর ডাক্তার নেই। থাকলে এখানে অল্প খরচে অস্ত্রোপচার করা যেত। অস্ত্রোপচার বেসরকারি হাসপাতাল বা বরিশালে করতে গেলে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হয়।
পার্শ্ববর্তী উপজেলা কাঠালিয়া থেকে আসা ফাহিমা আক্তার বলেন, পেটের ব্যথা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছি। কিন্তু কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাইনি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মামুন হোসেন জানান, আমাদের পুরাতন ভবনের অস্ত্রোপচার ও পোস্ট-অপারেটিভ (অস্ত্রোপচার পরবর্তী) দুটি কক্ষ নিয়ে তৈরি করা হয় একটি অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচার ইউনিট। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোটি টাকার মেশিন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও স্থাপন করেছে। কিন্তু কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অস্ত্রোপচার ইউনিটটি আজও চালু করা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী আজিম তালুকদার চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের ১৩ জন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও আছেন মাত্র তিনজন, কনসালটেন্টের ১১টি পদে আছেন মাত্র একজন।
তিনি আরো বলেন, সার্জন এবং গাইনি ডাক্তার না থাকায় অস্ত্রোপচার ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না।
এনএস//
আরও পড়ুন