ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নোট লিখে কিশোরীর আত্মহত্যা, অভিযুক্ত তরুণ গ্রেপ্তার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩০, ১২ মার্চ ২০২২

প্রতীকী ছবি ও সেই চিরকুট

প্রতীকী ছবি ও সেই চিরকুট

জামালপুরে যে উত্ত্যক্তকারীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সুইসাইড নোট লিখে কিশোরী আত্মহত্যা করেছে, সেই অভিযুক্ত তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন- র‍্যাব।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র‍্যাব-১৪ স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান জানান, শনিবার মধ্যরাতে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার চরশসা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত তরুণ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা র‍্যাবের কাছে স্বীকার করেছে এবং তাকে মেলান্দহ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান এই র‍্যাব কর্মকর্তা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জামালপুরের মেলান্দহ থানার ওসি এম এম ময়নুল ইসলাম বলেন, 'ওই ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মেয়েটির বাবা অভিযুক্ত তামিম আহমেদ স্বপন খানের বিরুদ্ধে গতকাল রাতে মামলা দায়ের করেছিলেন। র‍্যাব তাকে গ্রেপ্তারের পর আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।'

এদিকে, ভুক্তভোগী মেয়েটির করুণ ও হৃদয়স্পর্শী দুটি নোট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে অনেককে আবেগপূর্ণ মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, কিশোরী মেয়েটি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়তো। বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ঘরের কড়িকাঠের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করে স্বজনরা। সেই কক্ষ থেকেই তার হাতে লেখা ওই চিরকুট দুটি উদ্ধার করা হয়।

যাতে ওই গ্রামের এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয় এবং তাকে (মেয়েটিকে) দীর্ঘদিন ধরে সে উত্যক্ত করে আসছে বলেও সেখানে অভিযোগ করা হয়। ওই দিন ছেলেটি একটি কক্ষে তাকে আটকে রেখে খারাপ কাজ করেছে বলেও নোটে উল্লেখ করেছে কিশোরী মেয়েটি।

সেখানে সে লিখেছে, ‘মা, আমার সাথে.... চেয়ারম্যানের ভাতিজা আজকের দিনে এক রুমে কাটাইছে। পারলে ক্ষমা করো। যদি কোনো বিচার করো, ছেলেটার নাম তামিম আহমেদ শপন খান।’

"মা-বাবা তোমরা ভালো থেকো। আমারে ভুলে যেও। আমি বেঁচে থাকলে তোমাদের সম্মান শেষ হয়ে যেত। বাবা-মা আবার বলতেছি, ভালো থেকো। বাবা-মা ভালো থেকো। গুড বাই, সোনা বাবা-মা।"

কিশোরীটি আরও লিখেছে, "ও আমারে খুব ডিস্টার্ব করতো। আমাকে বলছে যে, ওর সাথে দেখা করলে ও আমার জীবন থেকে চলে যাবে। কিন্তু ও আমার সাথে খুব খারাপ কিছু করছে, বলার মতো না।"

মেয়েটির বাবা আবু সাঈদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে এসে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু সন্ধ্যায়ও তাকে ঘুম থেকে উঠতে না দেখে তার মা সেই কক্ষে গিয়ে দেখতে পান, বিছানার ওপর আড়ার সাথে তার দেহ ঝুলছে।’

‘তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে মেলান্দহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।’

আবু সাঈদ আরও বলেন, অভিযুক্ত তরুণটি বিভিন্ন সময় তার মেয়ের স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বিরক্ত করতো। এ নিয়ে তার অভিভাবকদের কাছেও বিচার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো সমাধান হয়নি।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার মেয়েটি বাসায় আসার পথে ওই তরুণ তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। এরপর বাসায় ফিরেই মেয়েটি আত্মহত্যা করে।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত তরুণের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

শুধু আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা কেন?
মেয়েটি মৃত্যুর আগে চিরকুটে উল্লেখ করে গেছে, আজকের দিনে এক রুমে কাটাইছে এবং তার সাথে 'খুব খারাপ কিছু' করায় সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। 

সেক্ষেত্রে শুধু আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা কেন নেয়া হয়েছে?

এ বিষয়ে ওসি এম এম ময়নুল ইসলাম বলেন, 'চিরকুটের বক্তব্যের কারণে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন মেয়েটির বাবা। আমাদের তদন্তে বাকি সব কিছুই বেরিয়ে আসবে।'

ওসি আরও বলেন, 'ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে এবং আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা পুরো ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারবো। তখন প্ররোচনা ছাড়াও অন্য বিষয় থাকলে সেটাও পরবর্তীতে মামলায় যুক্ত করা হবে।' সূত্র- বিবিসি।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি