প্রতিবন্ধী শাহিদা এখন ‘এক্সিকিউটিভ অফিসার’
প্রকাশিত : ০৮:৪৬, ২৯ মার্চ ২০২২
নিয়োগপত্র হাতে প্রতিবন্ধী শাহিদা খাতুন
পুলিশ নারী কল্যাণ (পুনাক) সমিতির সভানেত্রী জীশান মীর্জার উদ্যোগে চাকরি পেলেন যশোরের ঝিকরগাছার শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা খাতুন। আকিজ জুট মিলে এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে চাকরি হয়েছে তার।
প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে অনন্য নজির স্থাপনকারী শাহিদার হাতে গত ২৩ মার্চ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা।
এর আগে শাহিদা পরিচালিত সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন পুনাক সভানেত্রী। এ সময় প্রতিবন্ধী শিশুদের বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন তিনি। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের খোঁজখবর নেয়ার সঙ্গে তাদের চকলেট, নতুন পোশাক ও বিভিন্ন উপহার তুলে দেন পুনাক সভানেত্রী।
এক হাত ও দুই পা না থাকা শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা খাতুনের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে। মুদি দোকানি রফি উদ্দিনের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ।
দুই পা আর এক হাত না থাকলেও সচল আরেক হাত দিয়েই বাঁচার স্বপ্ন দেখেন শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা খাতুন। জন্ম থেকে শাহিদা ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে ২০১৫ সালে যশোর সরকারি এম এম কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেছেন। পাশাপাশি তিনি হস্তশিল্প, সেলাইসহ বিভিন্ন হাতের কাজও করতে পারেন।
প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে এলাকায় অনন্য নজির স্থাপন করেছেন শাহিদা।
অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্যও এগিয়ে আসেন শাহিদা। বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা। সেখানেই প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা আর নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
তারপরও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি না পাওয়ায় হতাশ ছিলেন প্রতিবন্ধিতা জয় করা শাহিদা।
চাকরি পাওয়ার খবর শুনে শাহিদাকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন আশপাশের মানুষ
গত ২২ ও ২৩ মার্চ যশোর জেলা পুলিশের সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে যশোর আসেন পুনাক সভানেত্রী। বুধবার জেলা পুনাক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শাহিদার সঙ্গে দেখা করে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন তিনি।
নিয়োগপত্র পেয়ে খুশিতে আত্মহারা শাহিদা খাতুন। তিনি বলেন, “অবশেষে আমার একটা কর্মসংস্থান হলো। পড়াশোনা শেষ করেও চাকরি না হওয়ায় আমি খুব দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। প্রতিবন্ধী হিসেবে পরিবারের কাছে বোঝা হয়েছিলাম। লেখাপড়া শেষ হলে বোঝাটা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পুনাক সভানেত্রীর কল্যাণে আমার একটা চাকরি হলো। এখন আমার মা-বাবার পাশে দাঁড়াতে পারবো।”
শাহিদা আরও বলেন, “চাকরিতে যোগদান করলেও আমার হাতে গড়া সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা চলবে তার নিজস্ব গতিতে। কেননা আমি প্রতিবন্ধী এই বোনদের মধ্যে সামনে নেতৃত্ব দেয়ার মতো অনেককেই গড়ে তুলেছি।”
পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে শাহিদাকে নিয়ে সংবাদ পড়েছি। তার প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে অনন্য নজির স্থাপন আমাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি অসহায় ও দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় শাহিদার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে পুনাক।
শাহিদার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় পরিবারটি এখন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শাহিদার বাবা মুদিদোকানি রফিউদ্দিন বলেন, শাহিদার জন্মের পর অনেকে কটু কথা বলেছে, মেরে ফেলতেও বলেছে। তারপরও অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছি। আজ সে উচ্চশিক্ষিত। দীর্ঘদিন পরে হলেও শাহেদা চাকরি পেয়েছে, এটা সমাজের অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। সমাজের অন্য প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েও লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, সমাজের বোঝা হবে না।
এএইচ/
আরও পড়ুন