কুমিল্লায় ৩ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা
প্রকাশিত : ১৯:২৩, ১২ এপ্রিল ২০২২
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর কুমিল্লা শহরে অভিযান চালিয়েছে। এ সময় তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ২৬.৬৭ কোটি টাকার গোপন বিক্রির হিসাব উদঘাটন করা হয়েছে। গোপনে বিক্রি করে ৪ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) প্রতিষ্ঠান তিনটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো- কিষোয়ান স্নাকস্, বনফুল অ্যান্ড কোং ও ফরিদ ফাইভার অ্যান্ড উইভিং। নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, কিষোয়ান স্নাকস্ ও বনফুল অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠান দুটি মিষ্টি ও বেকারি পণ্য উৎপাদন করে সারাদেশে সরবরাহ করে। প্রতিষ্ঠান দুটি কুমিল্লার ভাটপাড়ায় অবস্থিত। আর ফরিদ ফাইভার অ্যান্ড উইভিং সামুদ্রিক জাল ও রশ্মি উৎপাদন করে।
ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে একটি দল গত ১৭ জানুয়ারি এই তিন প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মূসক সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি সংগ্রহ করে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক দলিলাদি তল্লাশি করে বাণিজ্যিক বিক্রয় চালান ও বিক্রয় রেজিস্ট্রার জব্দ করে।
ভ্যাট গোয়েন্দার তদন্তে বেরিয়ে আসে, কিষোয়ান স্নাকস্ প্রতিষ্ঠানের ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৫ শতাংশ হারে পণ্যের অপ্রদর্শিত বিক্রয়ের মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ছিল ১৪ কোটি ৭৬ লাখ ১ হাজার ২৯ টাকা, যার ওপর প্রযোজ্য মূসক ৭৩ লাখ ৮০ হাজার ৫২ টাকা।
এছাড়া ১৫ শতাংশ হারে পণ্যের অপ্রদর্শিত বিক্রয়ের মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ৫ কোটি ৮২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৩৪ টাকা, যার ওপর প্রযোজ্য মূসক ৮৭ লাখ ৪৩ লাখ ৩২৫ টাকা। তদন্ত মেয়াদে সর্বমোট অপ্রদর্শিত মূসক ১ কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ৩৭৬ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ৯৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৭ সুদ টাকা প্রযোজ্য।
অন্যদিকে বনফুল অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠানটির ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে জব্দ করা দলিলাদি অনুযায়ী, বিক্রয় পাওয়া যায় ৬ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার ৬৫৪ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩ কোটি ৩১ লাখ ২৮ হাজার ৬২৫ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে।
এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার ২৯ টাকা কম বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করে, যার ওপর প্রযোজ্য মূসক ৪১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৬০ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭১৬ সুদ টাকা প্রযোজ্য।
আর ফরিদ ফাইভার অ্যান্ড উইভিংয়ের ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর সময়ের জব্দ করা দলিলাদি অনুযায়ী, বিক্রয় পাওয়া যায় ৩৯ কোটি ৭০ লাখ ৬৭ হাজার ৬২১ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩১ কোটি ৮৭ লাখ ২৭ হাজার ৩৪৬ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে।
এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৭ কোটি ৮৩ লাখ ৪০ হাজার ২৭৫ টাকা কম বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করে, যার ওপর প্রযোজ্য মূসক ১ কোটি ২ লাখ ১৮ হাজার ২৯৭ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯৫৩ সুদ টাকা প্রযোজ্য।
এই তিন প্রতিষ্ঠানে মোট মূসক বাবদ ৩ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ৬৩৩ টাকা এবং সুদবাবদ ১ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৬ টাকাসহ সর্বমোট ৪ কোটি ১৫ লাখ ৩ হাজার ৬৩৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে।
মইনুল খান বলেন, অভিযানে পাওয়া কাগজপত্র ও অন্যান্য তথ্যাদি যাচাই করে ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদি পাওয়া যায়। দীর্ঘ ৩ মাস তদন্ত করে প্রতিষ্ঠান ৩টির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে উদঘাটিত পরিহার করা ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে মামলা ৩টি সংশ্লিষ্ট কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট পাঠানো হয়েছে। একইসাথে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরও মনিটরিং করার জন্য সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এসি
আরও পড়ুন